ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিলুপ্তির পথে শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা

বিলুপ্তির পথে শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা

শেরপুর সীমান্ত এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা বিগত তিন বছরেও নিজ ভাষার পাঠ্যপুস্তক পায়নি। নেই প্রশিক্ষিত শিক্ষকও। ফলে বাংলা ভাষায় বাধ্যতামূলক শিক্ষার কারণে বিলুপ্তির মুখে পড়ছে গারো, হাজং, হদি, বর্মণসহ সাত সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা। ভাষা রক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপ এবং বই-শিক্ষক সরবরাহে জরুরি পদক্ষেপ চেয়েছেন স্থানীয়রা।

শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৫৪ হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। এর মধ্যে গারো সম্প্রদায় রয়েছে ১৬ হাজার ৫০০ জন, হাজং ৪ হাজার ৭০০, হদি ১০ হাজার ৬০০, বর্মণ ১৭ হাজার, কোচ ৩ হাজার ৫০০, ডালু ১ হাজার ১০০ এবং বানাই সম্প্রদায় ১১০ জন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ৪৯০ জন শিক্ষার্থীর জন্য নিজস্ব ভাষায় বইয়ের চাহিদা পাঠানো হলেও এখনো তা সরবরাহ করা হয়নি। অন্য শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও প্রায় পাঁচ শতাধিক।

স্কুলে নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা না থাকায় এবং পরিবারে ভাষা চর্চা কমে যাওয়ায় দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়দের মাতৃভাষা। গারো শিক্ষার্থী প্রদীপ কোচ বলেন, “আমরা বাংলাতেই পড়াশোনা করি। নিজেদের ভাষায় কথা বলাও কমে গেছে। তাই ভাষাটা হারিয়ে যাচ্ছে।”

শিক্ষক নিধারঞ্জন কোচ জানান, “পাহাড়ি অঞ্চলের অনেক স্থানে মাতৃভাষায় বই পাওয়া গেলেও শেরপুরে তা এখনো আসেনি। বারবার তাগিদ দিলেও বই মেলেনি। ভাষা সংরক্ষণের জন্য বই ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন।”

গারো নারী হেপি হাজং বলেন, “পরিবারে ভাষা চর্চা একেবারেই কমে গেছে। ফলে স্কুলে বই না থাকলে ভাষা একেবারেই হারিয়ে যাবে।”

বর্মণ সম্প্রদায়ের ব্রেমিং চিসিম বলেন, “আমরাও নিজেদের মধ্যে আর ভাষা ব্যবহার করি না। বাচ্চারা শিখবে কী করে?”

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়ন প্রকল্প (আইইডি) শেরপুরের ফেলো সুমন্ত বর্মণ বলেন, “বাংলা ভাষার আগ্রাসনে ক্ষুদ্র ভাষাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এখনই সরকার কার্যকর উদ্যোগ না নিলে এগুলো রক্ষা করা যাবে না।”

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, “প্রতি বছরই বইয়ের চাহিদা পাঠানো হয়। কেন বই সরবরাহ হচ্ছে না, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টিও জানানো হবে।”

ভাষা,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী,শেরপুর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত