ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কুড়িগ্রামে ভাড়াটে ডিএমএফের হাতে জরুরি বিভাগ, রোগীর মৃত্যু

কুড়িগ্রামে ভাড়াটে ডিএমএফের হাতে জরুরি বিভাগ, রোগীর মৃত্যু

কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত এমবিবিএস চিকিৎসক না থাকায় শ্বাসকষ্টে ভোগা এক রোগী চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বারান্দায় পড়ে থেকে চিকিৎসা না পেয়ে জামাল বাদশাহ (৫৫) নামের এক ব্যক্তি মারা যান। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

নিহতের স্বজনরা জানান, জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. কালিপদ সরকার দায়িত্বে না থেকে তার পরিবর্তে মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে রুবেল নামের একজন ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (DMF) পাশ ছাত্রকে বসিয়ে নিজে লালমনিরহাটে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন।

জানা যায়, শ্বাসকষ্ট শুরু হলে জামাল বাদশাহকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু হাসপাতালে এসে এক ঘণ্টারও বেশি সময় চিকিৎসক খুঁজে না পেয়ে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে রুবেল নামের ওই ভাড়াটে ডিএমএফ ডাক্তার দায়িত্বে আসলেও দায়সারাভাবে রোগীকে দেখে চলে যান। কিছু সময় পরেই রোগী মারা যান।

ঘটনার পর রোগীর স্বজনরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং জরুরি বিভাগে গিয়ে বিষয়টি প্রকাশ করলে ভাড়াটে ডিএমএফ পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নাজমুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং দায়িত্বরত চিকিৎসককে ফোন করলে তিনি জানান, তিনি হাসপাতালে নেই।

হাসপাতাল সূত্র ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করেছেন, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রায়ই এমবিবিএস চিকিৎসকের পরিবর্তে অর্থের বিনিময়ে ডিএমএফ পাস ছাত্রদের দায়িত্বে বসানো হয়। এতে প্রায়ই রোগীদের সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার ঘটনা ঘটে, এমনকি মৃত্যুও হয়।

নিহতের ভাতিজা একরামুল হাসান বলেন, ‘আমার ফুপা হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এক ঘণ্টা বসে থেকেও কোনো চিকিৎসক পাইনি। পরে একজন ছেলেকে (রুবেল) ডাকা হলে সে এসে রোগীকে দায়সারাভাবে দেখে চলে যায়। আমাদের ফুপা চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন। এই অব্যবস্থাপনা যেন আর কারো জীবন না নেয়, সরকারের কাছে এই অনুরোধ করছি।’

এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। যেহেতু কর্তব্যরত চিকিৎসক কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই দায়িত্বে অনুপস্থিত ছিলেন এবং ভাড়াটে ডিএমএফকে বসিয়েছেন—তাই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রোগীর মৃত্যু,জরুরি বিভাগ,ভাড়াটে ডিএমএফ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত