
রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে কৃষি খাতে মিনি কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা। এক সময় ফসল ফলানোর পর সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো কৃষকদের। বিশেষ করে শাক-সবজি ও ফলমূল পচনশীল হওয়ায় দ্রুত বাজারজাত করা জরুরি ছিল, কিন্তু কোল্ড স্টোরেজ এখন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এতে শুধু কৃষকদের আয় বাড়ছে না, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলা এলাকার কৃষকরা আম, বরই, টমেটো, শিম, গাজর, ফুলকপিসহ বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি সেখানে রেখেছেন। আম, লিচু, টমেটো, ক্যাপসিক্যাম ৩-৪ সপ্তাহ, লেবু, কমলা, গাজর, বাঁধাকপি ২-৪ মাস সেখানে সংরক্ষণ করা যায়।
মিনি কোল্ড স্টোরেজের স্বত্বাধিকারী বাঘার পাকুড়িয়া এলাকার শফিকুল ইসলাম সানা জানান, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আমাকে ১০ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করে দেয়। এরপর থেকে বাজারে দরপতন হলে আমি সহ এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও আম, বরই, টমেটো, শিম, গাজর, ফুলকপিসহ বিভিন্ন মৌসুমের ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণ করি। অথচ এর আগে ফল ও সবজি ক্ষেত থেকে তোলার পর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কম দামে সেগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হতাম। অনেক সময় পচেও যেত। এখন কোল্ড স্টোরেজ এ রাখার ফলে অনেক লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরো জানান, গত বছর আম মৌসুমে কোল্ড স্টোরেজ থেকে আমার প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। কৃষকরা এখন তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি দীর্ঘসময় ধরে তাজা রাখতে পারছেন, ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও কমে আসছে। একই কথা বলেন উপজেলার গড়গড়ী ইউনিয়নের কোল্ড স্টোরেজ-এর স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম।
উপজেলার কলিগ্রামের কৃষক বিদ্যুৎ হোসেন ও নারায়নপুর এলাকার কৃষক বিপদ সাহা জানান, গত বছর আমরা ওই কোল্ড স্টোরেজে আম রেখে অনেক লাভবান হয়েছি।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ফসল তোলার পর সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ২০-৩০% অপচয় হয়। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। তবে কোল্ড স্টোরেজের ব্যাপক প্রসার ঘটালে অপচয়ের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে আসবে। এতে একদিকে যেমন কৃষকের ক্ষতি কমবে, অন্যদিকে খাদ্যের অপচয়ও রোধ হবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কোল্ড স্টোরেজ কেবল কৃষকের জন্যই নয়, ভোক্তাদের জন্যও সুফল বয়ে আনছে। সারা বছর ধরেই এখন বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে কেবল নির্দিষ্ট মৌসুমেই মিলত। ফলে বাজারের সরবরাহ স্থিতিশীল থাকছে এবং দামও সহনীয় পর্যায় থাকছে। উদাহরণ স্বরূপ, শীতকালীন সবজি গ্রীষ্মকালেও পাওয়া যাচ্ছে, যদিও এর পরিমাণ এখনও সীমিত।
এ ব্যাপারে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশের কৃষি খাত আরও শক্তিশালী হবে। ফলে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প এর পরিচালক ড. এস, এম, হাসানুজ্জামান জানান, রাজশাহী বিভাগ আম, ড্রাগন ও সবজিতে সমৃদ্ধ। কিন্তু ইতঃপূর্বে এগুলো সংরক্ষণের জন্য কোন সংরক্ষাণাগার না থাকায় ফসল সংগ্রহোত্তর কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এই বিভাগের ৮টি জেলায় পাইলট ভিত্তিতে মোট ১১টি সংরক্ষাণাগার স্থাপন করা হয়েছে। এ ধরনের মিনি কোল্ড স্টোরেজে আম, টমেটো, গাজর, ড্রাগন ফল ও সবজি সংরক্ষণ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।