
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীতে পানি কমলেও নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ রয়েই গেছে। সেখানকার মানুষরা সুপেয় পানি, শুকনো খাবার, গো-খাদ্যসহ নানামুখী সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। কাজকর্মে ফিরতে না পারায় বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। তারা প্রশাসনের সাহায্যের আশায় থাকলেও প্রশাসন বলছে- বরাদ্দ কম; যতটা সম্ভব ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এদিকে পদ্মা-তীরবর্তী বাসিন্দাদের মাঝে নতুন করে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন আতঙ্ক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২০-২২ দিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। উজানের ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওইসব এলাকার মানুষের বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত। পানির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সদর উপজেলার নারায়ণপুর, শিবগঞ্জের পাঁকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের মানুষ। দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানির অভাব, গোখাদ্যসহ নানামুখি সঙ্কটে রয়েছে পানিবন্দি মানুষ। এছাড়া নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমি পানিতে নিমজ্জিত। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রমও।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের পাঙ্খা পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুর ৩টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির স্তর ছিল ২০ দশমিক ৪৪ মিটার। ফলে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি। মহানন্দা নদীতে একইদিন দুপুর ৩টা পর্যন্ত পানির স্তর ছিল ১৯ দশমিক ০৪ মিটার। ফলে নদীটির বিপৎসীমার ১ দশমিক ৫১ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মহানন্দায় পানি কমেছে ১৯ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে পুনর্ভবা নদীতে বর্তমানে নদীটিতে পানির স্তর রয়েছে ১৯ দশমিক ৬১ মিটার। যার ফলে নদীটির বিপৎসীমার ১ দশমিক ৯৪ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
শিবগঞ্জের দুর্লভপুরের বাসিন্দা রনি জানান, পদ্মায় পানি কমছে ঠিকই কিন্তু আমাদের দুর্ভোগ থেকেই গেছে। আমাদের পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পশু নিয়েও আছি দুশ্চিন্তায়। আশপাশে সব ডুবে গেছে। ঘাসও পাওয়া যায় না তাই খড় খাওয়াচ্ছি গরুগুলোকে। এখনও বাড়ির বাইরে গেলে নৌকার প্রয়োজন হয়।
সদর উপজেলার নারায়ণপুরের বেলাল উদ্দিন জানান, চাহিদা অনুপাতে সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পদ্মা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নতুন করে ভাঙন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে নারায়ণপুরের কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলায় ২৮ টন চাল ও ২৩০ পরিবারকে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৪ পরিবারকে ৮ বান্ডিল ঢেউটিন ও ২৪ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব জানান, পানি কমতে শুরু করায় দ্রুত এসব এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাবে। এখন কিছু কিছু এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। সে সব এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে আমরা কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।