ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পরিবেশ বিপর্যয়, ফরিদপুর জেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

পরিবেশ বিপর্যয়, ফরিদপুর জেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

সময়ের বিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখি ফরিদপুর জেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় তালগাছ, খেজুর বা যে কোনো উঁচু গাছে বাবুই পাখির বাসা দেখা যেত। এখন এসব বাসা চোখে পড়া খুবই বিরল। সম্প্রতি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ধুলপুকুরিয়া বিলের মধ্যে ও বোয়ালমারী রেল স্টেশনের দুটি তালগাছে বাবুই পাখির বাসা দেখা গেছে।

বাংলা সাহিত্যে বাবুই পাখি বিশেষ স্থান দখল করেছে। ছোট্ট এ পাখি নিয়ে রজনীকান্ত সেনের একটি ছড়া জনপ্রিয় হয়েছে। এতে বাবুই পাখির জীবন ও কর্মের কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায়।

বাবুইপাখি সাধারণত বাসা বানাতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত রাখে। অর্ধেক বাসা বাঁধার পর তার সঙ্গীকে খোঁজে। স্ত্রী বাবুইটি পছন্দ করলে চার দিনের মধ্যে বাসা বাঁধা শেষ হয়। একটি গর্ত ডিম রাখার জন্য বন্ধ থাকে, অন্যটি খোলা থাকে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য। বাসার ভেতরে-বাইরে কাদা লাগিয়ে ঝড়-বাতাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা হয়। রাতের বেলা বাসা আলোকিত করতে জোনাকি পোকা ধরে রাখা হয়। স্ত্রীকে আকর্ষিত করতে পুরুষ বাবুই খাল-বিল ও ডোবায় গোসল করে, ডালে ডালে নাচে।

বাবুইপাখির প্রজনন মৌসুম সাধারণত মে থেকে আগস্ট। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬টি বাসা বানাতে পারে। একটি স্ত্রী ২ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। দুই সপ্তাহে ডিম ফুটে বাচ্চা জন্মায়, তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা উড়ে যায়। এরা মূলত বীজভোজী এবং বিভিন্ন ধান, ভাত, পোকা, ঘাস ও ফুলের রেণু খেয়ে জীবন ধারণ করে।

পুরানো সময়ে গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুইপাখির বাসা দেখা যেত। তবে ক্রমশ পরিবেশদূষণ, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে খাবার সংকট এবং বাসস্থান হ্রাস পেয়েছে। উজ্জ্বল চক্রবর্ত্তী বলেন, “ছোটবেলায় বিভিন্ন তালগাছে অনেক বাবুইপাখির বাসা দেখতাম। এখন শুধু কয়েকটি তালগাছে দেখা যায়।”

বোয়ালমারী ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কালিপদ চক্রবর্ত্তী জানান, “পরিবেশদূষণ, তালগাছ নিধন ও বিষাক্ত কীটনাশকের কারণে বাবুইপাখির সংখ্যা কমে গেছে। খাবারের অভাবও তাদের জীবনের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাবুই পাখি আমাদের প্রকৃতির একটি সুন্দর সৃষ্টি ও আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক। টিকিয়ে রাখতে হলে বেশি করে তাল, খেজুর ও নারকেল গাছ রোপণ করতে হবে। সংরক্ষণ উদ্যোগ না নিলে বাবুইপাখির বাসা বানার গল্প শুধু বই-পুস্তকেই থাকবে।”

পরিবেশ বিপর্যয়, ফরিদপুর জেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি,হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই,ফরিদপুর জেলা,পরিবেশ বিপর্যয়
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত