
বর্ষাকালে দীর্ঘ সময় হাওড়ের পানিতে নিমজ্জিত থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার এক-তৃতীয়াংশ এলাকা। এই সময়ে প্রচুর জমি জলাবদ্ধ থাকায় সেখানে প্রচলিত কোনো ফসল চাষ করা যায় না। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায় এবং দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে কৃষকরা পাচ্ছেন সাফল্য ও বাড়তি আয়।
ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে জলাবদ্ধ জমিতে বাঁশ দিয়ে ভাসমান ডালি কাঠামো তৈরি করে সেখানে সবজি আবাদ শুরু হয়েছে।
এ পদ্ধতিতে সেচের পানি খুব কম লাগে এবং অতিবৃষ্টিতেও ফসলের ক্ষতি হয় না। বর্ষা মৌসুম শেষে একই কাঠামোতে আরও অন্তত দুই মৌসুম মাচা জাতীয় সবজি চাষ করা যায়, ফলে কৃষকরা অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই বাড়তি আয় করতে পারছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে নবীনগরের ইব্রাহিমপুর, নাটঘর, রছুল্লাবাদ, সাতমোড়া, সলিমগঞ্জ ও বড়িকান্দি ইউনিয়নে এই পদ্ধতিতে লাউ, ময়না লাউসহ নানা জাতের সবজি চাষ হচ্ছে।
ইব্রাহিমপুর গ্রামের কৃষক কাওছার মিয়া জানান, আগে বর্ষায় তার জমি তিন-চার মাস পতিত থাকতো। কিন্তু এবার ভাসমান ডালিতে লাউ চাষ করে ইতোমধ্যে প্রায় দুই শত লাউ বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা আয় করেছেন। তিনি আরও জমিতে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িঘর গ্রামের কৃষক সুমন মিয়া জানান, তিনি প্রথমবার ভাসমান ডালি পদ্ধতিতে ১৮ শতক জমিতে ময়না লাউ আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৪৫-৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন। তার দেখাদেখি আরও কৃষক এখন এই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, ‘ভাসমান ডালি পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করতে ইতোমধ্যে ২০০’র বেশি কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কাঠামো তৈরি, বীজ ও সার দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের এ প্রযুক্তি এখন কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতে এটি এই অঞ্চলের জন্য একটি সম্ভাবনাময় কৃষি পদ্ধতি হবে।’
তিনি আরও জানান, কৃষকদের মধ্যে প্রযুক্তিটি ছড়িয়ে দিতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠ দিবস, প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। জলাবদ্ধ জমি ব্যবহার করে এভাবে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন স্থানীয় কৃষকদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।