
ফরিদগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় স্থানীয় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যেখানে ভূমি সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই, জমি সংক্রান্ত সেবা প্রদান এবং জনগণের ভূমি বিষয়ক সমস্যার সমাধান করা হয়। এই কার্যালয় ভূমি সেবায় সরকারের দরজার মতো কাজ করে এবং সেবা গ্রহণকারীদের জীবনযাত্রার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এই গুরুত্বকে সামনে রেখে সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়াকে সহজ, স্বচ্ছ ও মনোরম করার লক্ষ্যে রেকর্ডরুম সংস্কার, পরিত্যক্ত পুকুর পরিষ্কারের মাধ্যমে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ আর এম জাহিদ হাসান।
সম্প্রতি সরজমিনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণের সময় তিনি একটি জরাজীর্ণ রেকর্ড রুম পান, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ নথি ও কাগজপত্র অযত্নে রাখা হত। তিনি সেই রুম সংস্কার করে তা সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রায় দ্বিগুণ আয়তনের (৫০০ স্কয়ার ফিট) নতুন রুম তৈরি করেছেন, যাতে নথি সংরক্ষণ আরও নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলভাবে হয়। অফিসের অভ্যন্তরের পরিবেশও তিনি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন। সহকারী কমিশনারের নিজ রুমসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের রুমকে পরিবেশবান্ধব করে তোলা হচ্ছে, যাতে সেবা গ্রহণকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। সেবাগ্রহীতাদের প্রতীক্ষার জন্য গোলঘর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা এখন বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে।
কার্যালয় সূত্রে আরো জানা যায়, অফিসের পাশের প্রায় পরিত্যক্ত পুকুরটি পরিষ্কার করে তার চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কার্যালয়ের সামনে খালি জায়গায় ফুল-ফলের বাগান গড়ে তোলার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে, যা সেবা গ্রহীতাদের জন্য একটি মনোরম পরিবেশ উপহার দেবে। এই সকল সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সম্পন্ন হয়েছে।
কার্যালয়ের হিসাব কর্মকর্তা মো. মাসুম বলেন, এসিল্যান্ড জাহিদ যোগদানের পর থেকে তিনি কার্যালয়কে পরিপাটি এবং সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট প্রধানগণের সাথে একাধিকবার আলাপচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সেবার মানকে উন্নত এবং স্বচ্ছ করতে প্রথম থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার দরুন বর্তমানে সেবাগ্রহীতারা খুব সহজ এবং দ্রুত সেবা নিতে পারছেন।
সেবা গ্রহীতারা তার এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সেবা গ্রহণকারী বৃদ্ধ মো. বিল্লাল বলেন, আগে এখানে আসতে গেলে অনেক ঝামেলা হত, কিন্তু এখন সেবা নেওয়া অনেক সহজ হয়েছে।
অন্য একজন সেবাগ্রহীতা মো. রহমান যোগ করেন, অফিসের পরিবেশ আগের তুলনায় অনেক সুন্দর হয়েছে। শুনেছি এগুলো আরও সুন্দর করতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ আর এম জাহিদ হাসান বলেন, আমরা চাই ভূমি সেবা গ্রহণে আসা মানুষের অভিজ্ঞতা যেন সহজ, সুষ্ঠু ও আরামদায়ক হয়। এজন্য আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি এবং আশা করি অতি শিগ্গিরই ফরিদগঞ্জবাসী একটি নতুন পরিবেশে সেবা গ্রহণের সুযোগ পাবেন।
প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক কাজেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন এই কর্মকর্তা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তিনি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন। এসময় মোট ৪৯টি মামলা পরিচালনা করে ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১০০ টাকা অর্থদণ্ড আদায় করা হয়েছে, যা আইন শৃঙ্খলা ও ভূমি সেবায় স্বচ্ছতার প্রতিফলন হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এ আর এম জাহিদ হাসান শুধুমাত্র প্রশাসনিক সংস্কারে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তিনি ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কর্মশালার উদ্বোধন করেছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে স্থানীয় মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ আর এম জাহিদ হাসানের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে ভূমি সেবার মানোন্নয়নে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং প্রশাসনিক সেবাকে আরও জনবান্ধব করে তুলবে বলে আশা করেন ফরিদগঞ্জবাসী।