
দেশের উত্তরাঞ্চলে আবিষ্কৃত পাঁচটি কয়লাখনির মধ্যে দিনাজপুরের দীঘিপাড়া কয়লাখনির কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ দীর্ঘদিন ধরে থেমে আছে। জ্বালানি সংকটে পড়া এই সময়ে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানির পরিবর্তে দেশীয় দীঘিপাড়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার এখন সময়োপযোগী দাবি হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে কয়লার মূল্যবৃদ্ধি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। দেশের পাঁচটি কয়লাখনিতে মোট ৩,১৯৭ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশে জ্বালানির প্রধান উৎস গ্যাস হলেও বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে জ্বালানি খাত চাপে পড়েছে। গ্যাসের মজুদ সীমিত হওয়ায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
উত্তরাঞ্চলের কয়লাখনিগুলোর মধ্যে দিনাজপুরে রয়েছে তিনটি—বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী ও দীঘিপাড়া। এছাড়া রংপুরের খালাশপীর ও জয়পুরহাটের জামালগঞ্জেও রয়েছে কয়লা খনি। শুধু দিনাজপুরের খনিগুলোতেই প্রায় ১,৪৬২ মিলিয়ন টন কয়লার মজুদ আছে।
দীঘিপাড়া কয়লাখনিটি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর আবিষ্কার করে। দীর্ঘ ১২ বছরের অনুসন্ধানের পর এখানে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন টন কয়লার মজুদ নিশ্চিত করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কয়লা খনি কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) তিন বছরের জরিপ পরিচালনা করে, যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রকল্প পরিচালক মো. জাফর সাদিক। জরিপ শেষে খনি বাস্তবায়নের প্রস্তাব জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায়।
তৎকালীন সরকার ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনে অনীহা প্রকাশ করলেও বর্তমান জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে দীঘিপাড়া খনি বাস্তবায়নের দাবি আবারও জোরালো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খনিটি চালু করা হলে এটি দেশের জ্বালানি খাতে বড় ভূমিকা রাখবে।
বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা দিয়েই চালু রয়েছে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। খনিটিতে প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ রয়েছে, তবে সুরঙ্গপথে কয়লা উত্তোলনের ফলে প্রায় ৮০ শতাংশ কয়লা মাটির নিচে রয়ে যাচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে এবং কয়লা উত্তোলনের হার কমছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যেই বড়পুকুরিয়ার উৎপাদন আরও কমে আসবে।
এই অবস্থায় রামপাল, পায়রা ও অন্যান্য কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখতে হলে দেশের নিজস্ব কয়লা ব্যবহার ছাড়া বিকল্প নেই। দীঘিপাড়া কয়লাখনিটি ওপেন মাইনিং পদ্ধতিতে চালু করা গেলে সরকার যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে, তেমনি এই অঞ্চলে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার যদি এখনই পদক্ষেপ নেয়, তাহলে বিদেশ থেকে ব্যয়বহুল কয়লা আমদানির প্রয়োজন অনেকাংশে কমে যাবে এবং দেশীয় কয়লা শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।