
লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলার বসতবাড়ির আঙিনায় শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ফুল ‘বাগান বিলাস’। জেলার অধিকাংশ বাড়িতে টিনের ঘরের ছাউনির মাঝামাঝি জায়গায় ফুটে থাকা এই ফুল যেন চোখে পড়ে সড়ক থেকেই। দূর থেকে তাকালেই মনে হয়—চিত্রশিল্পীর আঁকা কোনো জীবন্ত ছবি।
এই ফুল দেখতে অনেকটা কৃত্রিম কাগজের ফুলের মতো হওয়ায় অনেকে একে ‘কাগজ ফুল’ নামেও ডাকেন। তবে বাগান বিলাসের বিলাসী রূপ ও সৌন্দর্য দেখে উদ্ভিদবিদরা একে অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট বা শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ফুটন্ত বাগান বিলাস ফুলের রূপে মুগ্ধ না হয়ে থাকা দায়। সারা বছরই ফুল ফোটে, তবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও হেমন্ত ঋতুতেই সবচেয়ে বেশি। ফুল ফোটার সময় গাছ যেন পুরোপুরি ফুলে ছেয়ে যায়—সবুজ পাতা প্রায় দেখা যায় না। দেশে সাধারণত সাদা, লাল, হলুদ ও গোলাপি রঙের বাগান বিলাস ফুল দেখা যায়। অনেকে নিজের বসতবাড়ি, বাগানবাড়ি, গেস্ট হাউজ বা বারান্দা সাজাতে এই ফুলের চারা রোপণ করেন। যদিও ফুলটির কোনো গন্ধ নেই, তবে এর সৌন্দর্যই প্রধান আকর্ষণ।
দ্রুত বর্ধনশীল এই ফুলগাছ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। অনেকেই গাছ বেশি লম্বা হয়ে গেলে কাটিং করে ছোট করে রাখেন। বসতবাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাগান বিলাস একটি আদর্শ ফুল। গাছের কাটিং থেকেই সহজে নতুন চারা উৎপাদন সম্ভব।
বিভিন্ন উদ্ভিদবিজ্ঞানীর মতে, বাগান বিলাসের চার থেকে আঠারোটি প্রজাতি রয়েছে, যা নাইক্টেজিনাসিয়া (Nyctaginaceae) গোত্রভুক্ত। এটি সাধারণত লতা, গুল্ম বা ছোট আকৃতির গাছ হিসেবে পরিচিত। অনেক প্রজাতিই কাঁটাযুক্ত। কাঠজাতীয় লতাজাতীয় এই ফুলগাছ সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার অনন্য সৌন্দর্যের জন্য।
বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফুল ফোটার প্রধান সময় হলেও কিছু প্রজাতিতে সারা বছরই অল্পসংখ্যক ফুল দেখা যায়। ফুলগুলো ঘনভাবে ফোটায় গাছ যেন একেবারে ফুলে ঢেকে যায়। পাতলা ও কাগজের মতো টেক্সচারের কারণে ফুলটির আরেক নাম ‘কাগজ ফুল’ বা ‘কাগজি ফুল’। এছাড়া কীট-পতঙ্গমুক্ত গাছ হিসেবেও এটি বেশ পরিচিত।
পথচারী আইরিন বেগম বলেন, “রঙিন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে বাড়িঘর, যা দেখতে খুব সুন্দর লাগে। সবুজ গাছ আর গোলাপি ফুলে বদলে গেছে বাড়ির রূপ। রাস্তার পাশের দৃশ্যও এখন অনেক আকর্ষণীয়।”