ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিলুপ্তির পথে তিস্তা ও ধরলা নদীর সুস্বাদু বৈরালি মাছ

বিলুপ্তির পথে তিস্তা ও ধরলা নদীর সুস্বাদু বৈরালি মাছ

লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা নদীর ঐতিহ্যবাহী বৈরালি মাছ বিলুপ্তির পথে। ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সুস্বাদু এই মাছটি জেলেদের জালে আর আগের মতো ধরা পড়ে না। যেটুকু পাওয়া যায়, তা বাজারে বিক্রি হয় অত্যধিক চড়া মূল্যে। দেশের উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলায় অসম্ভব জনপ্রিয় এই মাছের সংকট স্থানীয়দের মধ্যে গভীর হতাশার জন্ম দিয়েছে।

সচেতন এলাকাবাসীর অভিযোগ, উজানে ভারতের একাধিক স্থানে এবং বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধায় সেচের জন্য বাঁধ দেওয়ার ফলে তিস্তা নদীতে স্রোত কমে চর পড়ে যাচ্ছে। একইভাবে ধরলা নদীর বাংলাদেশ অংশে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিলুপ্তির পথে বৈরালি মাছ।

একই কারণে নদীর দেশি প্রজাতির মাছের সংখ্যাও মারাত্মকভাবে কমে গেছে। হারিয়ে গেছে শুশুক, ঘড়িয়াল, মিঠা পানির কচ্ছপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী।

স্থানীয়ভাবে বৈরালি বা বৈরালী নামে পরিচিত এই মাছটিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ‘বোরালি’ নামে ডাকা হয়। বই-পত্রেও এটি বোরালি নামেই চিহ্নিত। বোরালি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম বারিলিয়াস বারিলা (Barilius barila)। এটি মূলত স্বচ্ছ পানির মাছ। পাহাড় বেয়ে নেমে আসা নদী তিস্তা-ধরলায় এই মাছ পাওয়া যায়।

তিস্তা-ধরলার ধারা নামায় ব্রহ্মপুত্র নদীতেও এই মাছ কিছু পরিমাণে মেলে। বাংলাদেশে কেবল উত্তরের জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামেই এই মাছ পাওয়া যায়, তবে বৈরালি বা বোরালি মাছের বিস্তার ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারের পাহাড়ি নদীগুলোতেও রয়েছে।

বোরালি মাছ সর্বোচ্চ ৬-৭ ইঞ্চি বা প্রায় ১০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং প্রস্থে প্রায় ১ ইঞ্চি আকারের হয়ে থাকে। রূপালী রঙের মাছটির গায়ে ছোট ছোট আঁশ, পিঠের রং হালকা মেটে, পেটের নিচে হলুদ দাগ থাকে। মাছটির পুঁটি মাছের মতো কাঁটা থাকলেও তা খুবই নরম। বৈরালি মাছ সাধারণত গ্রীষ্মকালীন সময়ে বংশবিস্তার করে থাকে।

দ্রুতগতির এই মাছটির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেকটা ইলিশ মাছের মতো। তীব্র স্রোতে উজানের দিকে ছুটে চলে বোরালির ঝাঁক। দিনের বেলা গভীর পানিতে সরে গেলেও সাধারণত বিকাল থেকে রাতের দিকে নদীর কিনারের দিকে পানির ওপরের স্তরে ঝাঁক বেঁধে চলে আসে। জেলেরা ছোট ছোট ‘চটকা জাল’ (হাতে টানা জাল) দিয়ে বৈরালি শিকার করেন বিকাল থেকে রাতের মধ্যে।

জেলেরা জানিয়েছেন, ইলিশ মাছের মতোই বৈরালি মাছ জালে ধরা পড়ার কিছুক্ষণ পরেই মারা যায়। আবার দ্রুত বরফে সংরক্ষণ না করলে বেশিক্ষণ টিকেও না।

জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলা নদীর উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করে সেচকাজের জন্য একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ভাটিতে তথা বাংলাদেশের অংশে তিস্তা ও ধরলায় প্রকট পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এই দুই নদী থেকে বৈরালি মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটছে।

বর্তমানে সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে মাছটির বংশবিস্তার এবং পুকুরে চাষযোগ্যতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

লালমনিরহাট জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলায় তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, সানিয়াজানসহ মোট ১৩টি নদী রয়েছে। এসব নদী মিলে প্রায় ১ হাজার ৯৬১ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।

এছাড়াও জেলার জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে বিল ১ হাজার ১৯৬ হেক্টর, পুকুর ২ হাজার ৫৩৩.৪২ হেক্টর, ধানক্ষেত ১ হাজার ৬৩৪ হেক্টর, বরোপিট ১১৩.৮০ হেক্টর, পেন কালচার ১৫০.৫০ হেক্টর, প্লাবনভূমি ২ হাজার ২১০.৪০ হেক্টর এবং খাল ২৮৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ ও উৎপাদন হচ্ছে।

এসব উৎস থেকে সারাবছর ১৮ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। তবে লালমনিরহাট জেলার মোট চাহিদা থেকে এই উৎপাদন ১০ হাজার ১২৪.৯৩ মেট্রিক টন কম।

সুস্বাদু বৈরালি মাছ,তিস্তা ও ধরলা নদী,বিলুপ্তির পথে
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত