ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে সিলেটবাসীর অবস্থান

উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে সিলেটবাসীর অবস্থান

সিলেটের অবহেলিত অবকাঠামো উন্নয়ন, রেলপথ সংস্কার, বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার, বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি বরাদ্দে ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করা ও সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে বৈষম্য ও বঞ্চনার প্রতিবাদে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছে সিলেটবাসী।

রোববার (১ নভেম্বর) সিলেট আন্দোলন এর ব্যানারে সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত কোর্ট পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।

কর্মসূচিতে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে সিসিকের পানির গাড়ি কোর্ট পয়েন্টের একটি অংশে রেখে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়, ফলে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ থাকে। তবে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ে পরিস্থিতি পরে স্বাভাবিক হয়।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের মেইন ফটকে তালা ঝোলানো হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালা ঝুলানোর পর সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটের উন্নয়ন কাজ দ্রুত না হলে এখানের ডিসি এসপিকে অফিসেই ঘুমাতে হবে। আমরা তাদের ছাড়ব না। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আমরা আঙুল বাঁকা করতে জানি।

অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন বঞ্চিত সিলেট বরাবরই উপেক্ষিত। সরকার দেশের অন্য বিভাগে যে পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে, সেই অনুপাতে সিলেটকে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই এবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণ–অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছি।

আরিফ বলেন, আমরা রোহিঙ্গা নই, সিলেট রোহিঙ্গা ক্যাম্পও নয়। অনেক রাজনৈতিক নেতা দাবি করেন, এই সরকারের কাছে দাবি করে কোনো লাভে নেই। সত্য কথা হচ্ছে, তারা তাদের স্বার্থের জন্য এসব কথা বলেন। এসব কথা যারা বলেন, তারা উন্নয়র সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তারা দেখে না যে, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনায় ঠিকই উন্নয়ন কাজ চলছে, বরাদ্দও হচ্ছে। কিন্তু সিলেটে হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো দলীয় স্বার্থে নয়, সিলেটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমেছি। এটা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক গণআন্দোলন। উন্নয়ন বৈষম্যের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে আমরা বিছানা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবনের সামনে অবস্থান করব, যতক্ষণ না তারা আমাদের কথা শোনে।

এসময় তিনি আরো বলেন, সরকারের কিছু সংখ্যক আমলা চরম সিলেট বিদ্বেষী। তারা সিলেটের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গেলেই আটকে দেন। তাদের বিরুদ্ধেই আমাদের আজকের এই অবস্থান। আমাদের দাবি একটাই- সিলেটের উন্নয়ন। এসময় সড়কেই দুপুরের নামাজ আদায় করেছেন তারা।

বিকেলে কর্মসূচিতে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম আসলে তার হাতে লিখিত দাবির কপি হস্তান্তর করেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দ্রুত জমি অধিগ্রহণ কাজ চলছে এবং দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তদারকি চলছে। যত প্রকল্প আছে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। পানি সমস্যার সমাধানে কাজ চলছে, এছাড়াও এয়ারলাইন্সের টিকের আপডাউন করা নিয়ে সরকার একটি আইন করতে যাচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন হলে তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, রেল লাইন সংস্কারে এমন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে আগামী শত বছরের জন্য যাতে সিলেটের মানুষের আন্দোলন না করতে হয়। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেটে আরো একটি ফ্লাইট চালু হবে, রাস্তা সংস্কার, উন্নয়নে অনেকগুলো ট্রেন্ডার করা হয়েছে অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট উন্নয়ন করতে হবে। সিলেটের পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকারের মহা-পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুত বাস্তবায়ন হলে সিলেটবাসী উপকৃত হবে।

এর আগে, এই কর্মসূচি সফলে শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর হজরত শাহজালাল (রহ.)–এর দরগাহ এলাকা থেকে মশালমিছিল শুরু হয়। পরে এটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

উন্নয়ন বৈষম্য,সিলেট,অবস্থান
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত