
বহিষ্কৃত নেতা ও আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে আবেদন জানিয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৩৩ জন বিএনপি নেতা।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব বরাবর পাঠানো ওই আবেদনে নেতারা অভিযোগ করেন, বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখেই জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রউফকে সাতক্ষীরা সদর-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আওতাধীন ১২টি ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ মোট ৩৩ জন নেতা যৌথভাবে এই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন।
আবেদনে বলা হয়, মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী আব্দুর রউফ অতীতে একাধিকবার দল পরিবর্তন করেছেন। ২০০৯ সালে বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে পরে আবার বিএনপিতে ফেরেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বিএনপি তাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করে, যা এখনও বহাল আছে।
এছাড়া, গত ২৩ এপ্রিল এক মাহফিলে জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা কবির বিন সামাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে তিনি সমালোচিত হন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় আলেম-ওলামারা মানববন্ধন করে তার গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
তৃণমূল নেতারা অভিযোগ করেন, সাতক্ষীরা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারি খাসজমি দখলের ঘটনায় গত বছর জেলা প্রশাসক তাকে প্রকাশ্যে ‘বাটপার’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের ভাবমূর্তি ও ঐক্য প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলেও উল্লেখ করা হয় আবেদনে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ ও সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু। আবেদনপত্রের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের কাছেও।
এদিকে, গত ৩ নভেম্বর রাতে দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ওই রাতেই খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বিনেরপোতা বাইপাস মোড়ে আব্দুর রউফের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের কারণে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় আব্দুর রউফকে বহিষ্কার করা হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল ও সরকারি খাসজমি দখলের অভিযোগেও আলোচনায় আসেন তিনি। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ বিঘা সরকারি খাসজমি পরে উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া, তার ভাই জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হবি ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন দখল করার পর প্রশাসনের সহায়তায় সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে হবি পরাজিত হন। তাদের ভাইপো আ.ন.ম আবু সাঈদও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব দখলের অভিযোগে আলোচনায় আসেন, যা এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।