ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতি: বরখাস্ত ২ শিক্ষক পুনর্বহালের চেষ্টা

মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতি: বরখাস্ত ২ শিক্ষক পুনর্বহালের চেষ্টা

সাতক্ষীরায় মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতির অভিযোগে চাকুরিচ্যুত দুই শিক্ষক ভ্রাতা চাকুরি ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা রাজনৈতিক নেতাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিচ্ছেন। স্থানীয়রা মনে করছেন, জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও যদি তাদের পুনরায় বহাল করা হয়, তাহলে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হবে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত ললিত মোহন সাহার দুই পুত্র বীরেন্দ্র নাথ সাহা এবং প্রতাপ কুমার সাহা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যথাক্রমে ২০০৮ ও ২০০৯ সালের নিয়োগে ২০০৯ ও ২০১০ সালে চাকুরীতে যোগদান করেন। তাদের ভাইপো আদিত্য সাহার পুত্র সুমন সাহা ২০১২ সালে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন।

তথ্য অনুযায়ী, মৃত ললিত মোহন সাহার মুক্তিযোদ্ধা না হলেও জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে তার সন্তানদের “মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা” ও “মুক্তিযোদ্ধার পুত্র কোটা” সুবিধা গ্রহণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

চাকুরীতে যোগদানের পর তারা মৃত ললিত মোহন সাহাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদন করেন। পরে উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই কালে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

এ বিষয়ে ধানদিয়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তবিবুর রহমানের পুত্র আবু সাঈদ মোহাম্মদ ইদ্রিস, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কাছে অভিযোগ করেন। সেই অনুযায়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বীরেন্দ্র নাথ সাহা ও প্রতাপ কুমার সাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ১৯ জুলাই ২০২৩ তারিখে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেন।

বরখাস্তের পর অভিযুক্তরা উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, খুলনায় আপিল করেন। আপিল না মঞ্জুর হওয়ায় তারা প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল, খুলনা আদালতে মামলা দায়ের করেন। ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে আদালত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের ১৯ জুলাই ২০২৩ সালের বরখাস্ত আদেশ বাতিল করেন এবং ৯০ দিনের মধ্যে আদেশ প্রতিপালনের নির্দেশ দেন। তবে এক বছর পার হয়ে গেলেও জেলা শিক্ষা অফিস এই আদেশ কার্যকর করেননি।

বর্তমানে তারা বরখাস্ত অবস্থায় থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে যে, তারা প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের আদেশকে কাজে লাগিয়ে পুনরায় চাকুরিতে বহালের জন্য পায়তারা চালাচ্ছেন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন।

বিভাগীয় তদন্তে জানা গেছে, মৃত ললিত মোহন সাহার নামে তৈরি করা ১৪৮৬০ নং মুক্তিযোদ্ধা সনদটি সঠিক নয় এবং তিনি কোন গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত নন। জনশ্রুতি রয়েছে, মৃত ললিত মোহন সাহারের অপর এক পুত্র যোগেশ সাহাও একইভাবে কোটা সুবিধা নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী পেয়েছেন।

অভিযুক্ত প্রতাপ কুমার সাহা বিষয়টি অস্বীকার না করেই বলেন, গত আড়াই বছর আগে আমাদের চাকুরি চলে গেছে, তাই এ নিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিন জানান, শিক্ষকরা আদালতে মামলার রায় পেয়েছেন। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। নির্দেশনা পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষক পুনর্বহালের চেষ্টা,মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত