
‘সবুজ রঙের মায়ায় কৃষক মোদের ফলিয়েছেন ধান, দেখতেই তো যেন মনে জাগে মধুর সেই অনুভূতি।’ সত্যিই তাই। সবুজের মায়ায় কৃষক মাঠময় সাজিয়েছে সোনালী ধানের শীষে।
কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে সকালের সোনারোদ। শেষ হেমন্তের মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে মাঠ ভরা সোনালী ধান। লেজঝোলা ফিঙে আর শালিক ঝগড়া করে উড়ে যায়। এসব কিছুই দেখার ফুরসত নেই যেন কৃষকের, মাঠের পাকা ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়।
রোববার (১৬ নভেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়,
ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের কৃষকেরা। এবার উপজেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন চলছে মাঠে মাঠে ধান কাটার উৎসব। নবান্নের আমেজে চলবে পিঠা-পুলির উৎসব। আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা বেজায় খুশি। শিশিরের ভারে হেলে পড়েছে ধান। ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পান্তা খেয়ে কাস্তে হাতে কৃষক মাঠে ছোটেন সেই ধান কাটতে। ধানের পাঁজা মাথায় নিয়ে কৃষক যখন আইল পথে পায়ের ছাপ এঁকে হেঁটে যান তখন যেন মনে হয় সূর্যের আলোয় কৃষকের মাথায় স্বর্ণ দানা চিকচিক করছে।
হেমন্তের বাতাসে ভেসে বেড়ায় পাকা ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ। দিনভর কয়লা খাটুনি খেটে ধান কাটার পর মাড়াই শেষে ঘরে তুলছেন কৃষকেরা। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করছেন কৃষানি বধূরাও। আর এভাবেই দেখতে দেখতে গোলা ভরে উঠছে কৃষকের। গ্রামে গ্রামে চলছে নবান্ন উৎসব। ঋতুচক্রের নিয়মেই হেমন্তের হাত ধরে আসে নবান্ন। গ্রামবাংলার মাঠে-ক্ষেতে চলছে আমন ধান কাটার মহোৎসব নবান্ন। যে নবান্ন হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে পাওয়া চালের প্রথম রান্না উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসব। নবান্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালে ফিরনি-পায়েস অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়।
নবান্নে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়, মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইয়র’ আনা হয়। নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্য মেলায়।
উপজেলার পূর্ব দ্বীপেশ্বর গ্রামের রাসেল মিয়া তার পাঁচ বিঘা জমিতে এবার আমন ধান চাষ করেছিলেন। ভালো ফলনে তার মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির চার বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলেন। নিজ জমিতে ধান কাটতে গিয়ে বলেন, ফলন খুব ভালো হয়েছে।
চরকাটিহারী গ্রামের কৃষক রনি মিয়া, বিশ্বনাথ পুরের মো. জাকির, গড়বিশুদিয়া গ্রামের রিয়াদ হোসেনসহ অনেকে জানান, যথাসময়ে সার, বালাইনাশক ও সেচ দিতে পারায় ভালো ফলন হয়েছে, তবে চাষাবাদ সংশ্লিষ্ট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ব্যাপক চাপে ফেলেছে কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরুল কায়েস জানান, এ বছর উপজেলায় সাত হাজার তিনশ’ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম আমন আবাদ হয়েছে। তবে হোসেনপুরে ভালো ধান উৎপাদন হয়েছে।