ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বরগুনায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে ডেঙ্গু, জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক

বরগুনায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে ডেঙ্গু, জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক

উপকূলীয় জেলা বরগুনায় কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছেনা ডেঙ্গু পরিস্থিতি। মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বর্ষা শেষে শীত আসলেও এখনো প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে অন্তত ২০ থেকে ৫০ জন, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন রোগীরা, রয়েছে চিকিৎসক ও জনবলের সংকট। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে রোগী ও স্বজনদের মাঝে।

এদিকে চিকিৎসকরাও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না কবে নাগাদ নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ চিকিৎসকদের।

বরগুনা সিভিল সার্জন অফিসের হিসেব অনুযায়ী, ১৮ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১৯ নভেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত (২৪ ঘন্টায়) বরগুনায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২৬ জন। বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬৫ জন। এ বছরের এক জানুয়ারি থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৩৬৬ জন। এ বছর সারাদেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৮৬ হাজার ৯২৪ জন। অর্থাৎ সারা দেশের প্রায় শতকরা ১০ ভাগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে বরগুনা জেলায়। অন্যদিকে এ বছর বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ৭১২ জন। সে হিসেবে বিভাগের ৪৭ দশমিক ৫০ ভাগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে শুধু বরগুনা জেলায়। সরকারি হিসেবে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ জন। তবে হাসপাতালের বাইরে অথবা উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়ার পথে অথবা জেলার বাইরের হাসপাতাল মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৬৫ জন।

এদিকে ২০২৪ সালে বরগুনায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৩৪ এবং মারা যান ৪ জন। ২০২৩ সালে আক্রান্ত হয় ৪ হাজার ৫৯২ জন এবং মারা যায় ৭ জন। ২০২২ সালে পুরো বছরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৮৫ জন। ওই বছরে কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যায়নি।

বরগুনায় এডিস মশার লার্ভা সংক্রান্ত এক জরিপের ফলাফল এ বছরের ২৫ জানুয়ারি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) প্রকাশ করেছে। সেখানেও তারা বরগুনা পৌরসভায় ৩১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে বৃষ্টির পানি ড্রামে ধরে রাখায় এডিস মশার লার্ভা তৈরি হয়েছে বলে জানান।

আইইডিসিআর এর জরিপে আরও জানানো হয়, ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই) ২০ বা এর বেশি হয়, তাহলে সেখানে এডিসের লার্ভার উচ্চ উপস্থিতি আছে বলে ধরা হয়। কিন্তু বরগুনা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিআই যথাক্রমে ১৫৩ ও ১৩৩। আর গ্রামাঞ্চলে বিআই ১৬৩। শহরের থেকে গ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে সচেতনতার অভাব, সরকারি বেসরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকাকে দায়ী করছেন সচেতন নাগরিকরা।

এ বিষয়ে জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, পৌর শহরগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তুলনামূলক অনেকটা কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের বিষয়ে। যার কারণে এখন রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে যে সময় মশা নিধনে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, তখন নেওয়া হয়নি, যার কারণে এখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্ বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখা সহ নানা কারণে আজকে আমাদের এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে জনগণকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ সিভিল সার্জনের।

বৃষ্টি কমলেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না আসার বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, সারাদেশে ডেঙ্গুর যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে তাতে বছরের কোনো সময়ই পুরোপুরি ডেঙ্গু মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

বরগুনা,ডেঙ্গু,আতঙ্ক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত