
ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে উঁচু ভবন থেকে নামতে গিয়ে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন।
এর মধ্যে সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ৬ তলা ভবনের ছাদের রেলিংয়ের এক সাইড ভেঙে পড়ে একই পরিবারের বাবা, মেয়ে ও ছেলেসহ চারজন আহত হন। আহত মেয়ে তাসফিয়া (১৭)-কে নরসিংদী সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দিয়ে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ পাঠানো হয়। গুরুতর অবস্থায় আহত বাবা দেলোয়ার (৩৭) ও ছেলে ওমরের (৮) মাথায় প্রচণ্ড আঘাত ও রক্তক্ষরণ হলে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু হাফেজ ওমর (৮)-কে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে রাতে মারা যান দেলোয়ার।
অপরদিকে, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫) নামক একজন বৃদ্ধ মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়েন। পরবর্তীতে তাকে জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।
এছাড়াও পলাশ উপজেলার ডাংগা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নাসিরউদ্দিন (৬০), ভূমিকম্পের সময় ফসলি জমি থেকে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে আসার পথে রাস্তা থেকে নিচে লাফ দিয়ে পড়ে মারা যান। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করায় নিকটাত্মীয়গণ লাশ হাসপাতালে নেননি।
এদিকে শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আজকিতলা (পূর্বপাড়া) গ্রামের ফোরকান (৪০) ভূমিকম্পন কালে কম্পনের ফলে গাছ থেকে পড়ে যান এবং তাৎক্ষণিক নরসিংদী জেলা হসপিটালে নিলে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করে। ঢাকায় নেওয়ার পথে রাস্তায় মৃত্যুবরণ করেন।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন জানান, আজ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদী জেলার সদর ও পলাশ উপজেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প ঘটে। যার ফলে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হলে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে প্রেরণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও অত্র সাবস্টেশনের বিপুল পরিমাণ পিটি (প্রডাকশন ট্রান্সফর্মার) ভূ-কম্পনের ফলে ভেঙে পড়ে। ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার কারখানার ইউরিয়া প্রডাকশন ভূমিকম্পন জনিত কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ভূ-কম্পনের সময় ইঞ্জিন মেশিনারিজ ভাইব্রেশনের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যায় এবং মেশিনারিজ চেকিং অপারেশনে আছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সার্কিট হাউসসহ শতাধিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো জানান, ভূমিকম্পে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট তথ্যের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে কন্ট্রোল রুম খুলে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।