ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হোসেনপুরে ফুটপাতে পিঠা বিক্রির ধুম

হোসেনপুরে ফুটপাতে পিঠা বিক্রির ধুম

‘পরের ঘরের পিঠা, দাঁতে লাগে মিঠা’—এ প্রবাদ বাক্যটি এখন চিরসত্য হয়ে যাচ্ছে। একসময় গ্রাম বাংলায় নবান্নে ঘরে ঘরে কৃষাণিরা পিঠা তৈরির উৎসবে মেতে উঠতো। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। গ্রাম কিংবা শহরের বধূরা পিঠা তৈরিতে তেমন আগ্রহী নয়। গ্রাম বাংলায় এখনো শীতের আমেজে নবান্নের ধান কাটার উৎসব। তবুও রাস্তার ফুটপাতে জমে উঠেছে পিঠা তৈরি ও বিক্রির ধুম।

তবে যাই হোক—সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার হিমেল বাতাসে ভাঁপা পিঠার গরম আর সুগন্ধি ধোঁয়ায় মন আনচান করে ওঠে। সরষে বা ধনে পাতা বাঁটা অথবা শুঁটকির ভর্তা মাখিয়ে চিতই পিঠা মুখে দিলে ঝালে কান গরম হয়ে শীত পালায়। শীতের আমেজ শুরুর সাথে সাথে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার অলি-গলির ফুটপাতের বিভিন্ন পয়েন্টে এখন চলছে পিঠা তৈরি ও কেনাবেচার ধুম।

একদিকে জাতীয় নির্বাচনী হাওয়ায় জনসমাগম সর্বত্র। তাই ফাঁকে ফাঁকে পিঠা হলে মন্দ নয়। পিঠাপ্রেমী মানুষ শীতের পিঠার স্বাদ গ্রহণ করতে ফুটপাতের এসব পিঠার দোকানে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ভিড় করছেন এবং নির্বাচন আলাপ নিয়ে মশগুল। আবার অনেকে পরিবারের চাহিদা মেটাতে পিঠা ক্রয় করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।

এ ছাড়াও সন্ধ্যার পর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, দোকান, ক্লাব, আড্ডায়ও পিঠার আয়োজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শ্রমজীবী, রিকশা-ভ্যানচালক, ড্রাইভার, বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকসহ অভিজাত শ্রেণীর লোকজনের কাছেও অত্যন্ত প্রিয় শীতের পিঠা। শীতে পরিবারের সবাই নানা পিঠা খেতে উৎসাহী হয়। গ্রাম থেকে শহরের সকল পরিবারেই চলে এ চাহিদা। কিন্তু এ পিঠা তৈরিতে নানা ঝামেলা পোহাতে হয় গৃহবধূদের। দরকার পড়ে নানা উপকরণের।

অধিক মূল্যে চিনি, গুড়, দুধ কেনা কষ্টসাধ্য। তাদের কাছে পিঠা খাওয়া শুধুই স্বপ্ন। কিন্তু তারপরও থেমে থাকে না তাদের পিঠা খাওয়া। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের পিঠা খাওয়ার জন্য উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধ শতাধিক পিঠার দোকান।

সরেজমিনে উপজেলার পৌর শহরের হাসপাতাল মোড় এলাকায় দেখা যায়, পিঠা তৈরি করছেন দোকানি আর দলবেঁধে শিশু, কিশোরসহ সকল শ্রেণির মানুষ শীতের পিঠা খেতে ভিড় করছেন।

পিঠাগুলোর মধ্যে আছে—ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, মেরা পিঠা, তেলের পিঠা, গুলগুলি পিঠা, ডুবা পিঠা, মাছের পিঠা, ঝাল পিঠা, সবজি পিঠাসহ হরেক রকমের বাহারি পিঠা।

হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুল হক বলেন, সন্ধ্যার পর শীতের আমেজে দাঁড়িয়ে পিঠা খেতে দারুণ ভালো লাগে। কারণ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠাগুলো খেতে দারুণ মজাদার।

স্থানীয় বই বিক্রেতা নবী হোসেন বলেন, আগেকার দিনের মতো আর সেই বাহারি পিঠার স্বাদ পাই না। আগের দিনে আত্মীয়স্বজন নিয়ে কত মজা করে বাড়িতে পিঠা তৈরি করে আনন্দের সাথে সকলে মিলে খেতাম। এখন হাটবাজারে সকালে ও বিকালে পিঠা তৈরি করে বিক্রি করেন। তাই আর কষ্ট করে বাড়িতে তৈরি করতে হয় না, বাজার থেকেই কিনে খাওয়া হয়।

হোসেনপুর বাজারে পোস্ট অফিস মোড়ের পিঠা বিক্রেতা হাসেন আলী বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় আধামণ চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করি। এতে ব্যবসাও ভালো হয়। প্রতিদিন আয় হয় প্রায় দুই হাজার টাকা। তাছাড়া অনেকেই পিঠা খান এবং বাড়ির জন্য নিয়েও যান।

বাজারের পিঠা বিক্রেতা রেনু বলেন, শীত আসলেই প্রতিবছর সকালে ও বিকালে পিঠা বিক্রি করি। বেচাবিক্রি খুব ভালো হয়। এতে করে চাল ও জ্বালানি খরচ বাদে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার থেকে পাঁচশ’ টাকা লাভ হয়।

হোসেনপুর যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, শীতকাল আসলেই নানান রকমের পিঠা বিক্রির ধুম পড়ে হাটবাজারে। যুবরা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এ ব্যবসায় জড়িত হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।

পিঠা বিক্রির ধুম,হোসেনপুরে ফুটপাত
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত