ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মাছ ধরার ছদ্মবেশে ইয়াবা পাচার, কায়ুকখালী খাল নিরাপদ রুট

মাছ ধরার ছদ্মবেশে ইয়াবা পাচার, কায়ুকখালী খাল নিরাপদ রুট

কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী খাল এখন মাদক কারবারিদের জন্য পরিণত হয়েছে নিরাপদ রুটে। মাছ শিকারের আড়ালে এক শ্রেণির মাদকের গডফাদাররা বৈধ মাছ ব্যবসাকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে মিয়ানমার থেকে নিয়মিতভাবে সাগরপথে ইয়াবার বড় বড় চালান দেশে প্রবেশ করাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কায়ুকখালী খালকে মাদক পরিবহনের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, কয়েক বছর আগে কায়ুকখালী বোটঘাটে মাত্র ৪০–৫০টি বোট ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কিছু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নামে-বেনামে বিপুল সংখ্যক বোটের মালিক হয়ে যান। এসব বোট ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনের পশ্চিম পাশে গভীর সমুদ্র থেকে ইয়াবা এনে এই ঘাট দিয়ে দেশের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়।

প্রশাসনের নজর এড়িয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি এই ঘাটকে মাদক পাচারের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বৈধ বোট মালিকরা জানান, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় না আনলে বৈধ ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কোস্টগার্ড স্টেশন টেকনাফের একটি দল পৌরসভার কায়ুকখালী বোটঘাট এলাকার একটি ফিশারিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মাছ সংরক্ষণের কক্ষের ভেতরে অভিনব কায়দায় লুকানো অবস্থায় ৯ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার ও একজন মাদক পাচারকারীকে আটক করা হয়।

তিনি বলেন, আটককৃত ব্যক্তি ও জব্দকৃত ইয়াবার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষায় কোস্টগার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।

টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী বোট মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মাদক ও মানবপাচারসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বোট মালিকদের দূরে রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। সমিতির আওতাধীন প্রতিটি ফিশিং বোট মালিকের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়েছে। তাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে—কোনো বোট মাদক চোরাচালান বা অন্য কোনো অপরাধে জড়িত হলে সংশ্লিষ্ট মালিক দায়ী থাকবেন এবং সমস্ত দায়ভার বহন করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোট মালিক জানান, বউয়ের স্বর্ণ বিক্রি করে একটি বোট কিনেছেন সংসার চালানোর জন্য। কিন্তু কিছু মাদক কারবারি ও রোহিঙ্গা মাঝিদের সহযোগিতায় মাছ ধরার নামে সাগরপথে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে, এতে বৈধ বোটমালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

উখিয়া ৬৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জসীম উদ্দীন বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর (রবিবার) সন্ধ্যা ৬টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী খালের ফিশারিঘাট এলাকায় বিজিবির ৬৪ ও ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের যৌথ অভিযানে একটি মাছ ধরার বোট থেকে ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

এ সময় পল্লান পাড়া এলাকার মৃত সৈয়দ আমিরের ছেলে মো. সাদেক (১৯) এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২৭-এর এ ব্লকের মৃত কবির আহমেদের ছেলে আনাছ (৪০) গ্রেপ্তার হন। উদ্ধার হওয়া ইয়াবা টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী বোটঘাটের রশিদ উল্লাহ ওরফে কালা পুতিয়ার মালিকানাধীন ট্রলার থেকে পাওয়া যায়।

তিনি পুরাতন রোহিঙ্গা হলেও টেকনাফ পৌরসভার কলেজপাড়া ও নতুন পল্লানপাড়া এলাকায় বসবাস করেন এবং তার একটি সক্রিয় মাদক সিন্ডিকেট রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক আরও জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চলতি বছরের ১০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাতে কোস্টগার্ড আউটপোস্ট শাহপরীর দ্বীপ এবং র‌্যাব-১৫ সিপিসি-১ এর একটি যৌথ দল টেকনাফের ময়দানের ঘোলা সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় একটি ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোট সন্দেহজনক আচরণ করে পালানোর চেষ্টা করলে এক ঘণ্টা ধাওয়া করে গভীর সমুদ্রে সেটি আটক করা হয়।

পরে তল্লাশিতে জালের ভেতরে বিশেষভাবে লুকানো ৫০ হাজার ইয়াবা পাওয়া যায় এবং ৭ জন মাদক পাচারকারী মাঝি-মাল্লাহকে আটক করা হয়। আটক জেলেরা হলেন মোহাম্মদ ফারুক (২০), ওমর ফারুক (২৭), আরাফাত উল্লাহ (২৬), মোহাম্মদ আনিস (২৩), ফয়াজ উল্লাহ (২৭), মোহাম্মদ রফিক (২৬) ও আসাদ উল্লাহ (২৫)। তারা সবাই হ্নীলা ইউনিয়নের ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, মাদকবিরোধী কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে জেলেদের নিবন্ধন ও ট্রলার পর্যবেক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা চলছে। সব বোটে জিপিএস ট্র্যাকার বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

এতে সীমান্ত অতিক্রম করলে নোটিফিকেশন পাওয়া যাবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না ফিরলে দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তার মতে, এসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে মাদক প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হবে।

নিরাপদ রুট,কায়ুকখালী খাল,ছদ্মবেশে ইয়াবা পাচার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত