অনলাইন সংস্করণ
১৮:৫৯, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ। মামলাগুলোর মধ্যে একটি হয়েছে সাভার মডেল থানায় এবং বাকি দুটি আশুলিয়া থানায়।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবীর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার এই মামলা গুলোর চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
সাভার মডেল থানার মামলা
সাভার মডেল থানার তথ্যমতে, সাভারে শহীদ হওয়া নবী নুর মোড়লের স্ত্রী আকলিমা বেগম বাদী হয়ে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও প্রায় তিন শ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের বিষয়ে নানা দিক থেকে তদন্ত চালায় পুলিশ। তদন্ত শেষে এজাহারনামীয় ১২৫ আসামির মধ্যে ১১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তবে ১৮ জন আসামির বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি। এ কারণে তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
এছাড়াও চার্জশিটে নাম রয়েছে—আওয়ামী লীগের সাবেক সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র হাজী আব্দুল গণি, সাবেক আওয়ামী ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন এবং আওয়ামী লীগের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেনসহ মোট ১১৪ জনের।
আশুলিয়া থানার মামলা
আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মামুন খন্দকারের স্ত্রী মোসাম্মৎ সাথী গত বছরের ২২ আগস্ট আশুলিয়া থানায় ৩৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তে আরও ১৯ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে, মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলার এজাহার বহির্ভূত ১ জন ও এজাহারনামীয় ৭ জনের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ না পাওয়া যাওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম, ইয়ারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম আহম্মেদ সুমন ভূঁইয়া, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির সরকার, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এনামুল হক মুন্সী, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা লীগ নেত্রী মনিকা হাসান, ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, মো. ছবেদ আলী, আশুলিয়া থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মইনুল ইসলাম ভূঁইয়া।
এর পাশাপাশি চার্জশিটে নাম রয়েছে—ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মারুফ হোসেন সরদার, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি এএফএম সায়েদ, সাবেক তদন্ত ওসি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, ওসি অপারেশন নির্মল কুমার দাশ, ঢাকা জেলা উত্তরের সাবেক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (অ্যাডমিন) হোসেন শহীদ চৌধুরীসহ মোট ৪৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর।
আশুলিয়া থানার অপর মামলা
চার্জশিট দাখিল করা আশুলিয়া থানার অপর মামলা গত বছরের ২৮ আগস্ট দায়ের করেন শহীদ রমজান আলীর বাবা নজরুল ইসলাম। মামলায় ৬০ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাত আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তের পর এজাহারনামীয় ৪৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়। বাকি ১৭ জনের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না থাকায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ মামলাতেও সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া চার্জশিটে ফারুক হাসান তুহিন, সাবেক চেয়ারম্যান মো. পারভেজ দেওয়ান, সুমন ভূঁইয়া, কবির সরকার, ধামসোনা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সিকদার, ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের ঢাকা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জালাল, সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক ভুঁইয়া সহ মোট ৪৯ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির গণমাধ্যমকে জানান, সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে এখনও সূক্ষ্ম তদন্ত চলছে। এর মধ্যে তিনটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর প্রতিবেদন পর্যায়ক্রমে আদালতে দাখিল করা হবে।