
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের বিধিমালা প্রকাশ ও নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের ঘণ্টা বেজে উঠেছে। রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রত্যেকেই ইনক্লুসিভ প্যানেল গঠনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি কিছু স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীরাও আংশিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে নিজেদের প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছে।
শাখা রাজনৈতিক দলগুলোর সূত্রে জানা যায়, চারটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন অন্তত তিনটি প্যানেল গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে। শাখা ছাত্রদল ও শাখা ছাত্রশিবির ইনক্লুসিভ প্যানেল গঠনের পরিকল্পনা করেছে, অন্যদিকে জাতীয় ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদ যৌথভাবে একটি প্যানেল গঠনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারলেও এই দুই দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। এছাড়া নিজেদের শক্তিশালী করতে একজোট হচ্ছে বাম সংগঠনগুলো।
ইউনিক প্যানেলের প্রচেষ্টা ছাত্রদলের
শাখা ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদলে শীর্ষ তিন পদ— ভিপি, জিএস ও এজিএস— এর মধ্যে দুটি পদে পরিচিত ও জনপ্রিয় নারী প্রার্থী থাকতে পারেন, এর মধ্যে অন্তত একজন ছাত্রদলের বাইরে থেকে আসতে পারে বলে জানা গেছে। সংগঠনের বাইরেও ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ এমন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা আলোচনা করছে। এছাড়া অন্যান্য পদে ছাত্রদল একাডেমিক, ক্রীড়া বা অন্যান্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনকারী শিক্ষার্থীদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। তবে প্যানেলে পাঁচ থেকে সাতজন পর্যন্ত প্রার্থী সংগঠনের বাইরের হতে পারে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “আমরা এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। দলের ভেতর ও বাইরে থেকে যারা আগ্রহ দেখিয়েছেন আমরা তাদের সমর্থন দিচ্ছি, যাচাই-বাছাই চলছে। নারী ও সনাতনী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে একটি ইউনিক প্যানেল গঠনের চেষ্টা চলছে।”
মেধাবী ও পরিচিত মুখদের টানছে শিবির
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরও তাদের সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে থেকে নারী শিক্ষার্থী ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনে চেষ্টা করছে। শীর্ষ তিন পদের অন্তত একজন প্রার্থী সংগঠনের বাইরের হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে প্যানেল গোছাতে কোন পদটি ছাড়বে মিত্রের জন্য তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া ছাত্রশিবির তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রী সংস্থা থেকে নারী শিক্ষার্থীসহ জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া এবং সমমনা শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এর বাইরে ছাত্র শিবির ক্যাম্পাসে যারা মেধাবী ও সুন্দর ভাবমূর্তির অধিকারী এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে সক্রিয় ছিল তাদেরকে প্যানেলে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । তবে এখনো পর্যন্ত প্যানেল চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে শাখা শিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনের চেষ্টায় আছি। প্যানেলে শিবির, ছাত্রী সংস্থা এবং সংগঠনের বাইরের শিক্ষার্থীরাও থাকবে।”
একত্র হচ্ছে অধিকার-ছাত্রশক্তি
দীর্ঘদিন পৃথকভাবে রাজনীতি করেছে জাতীয় ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদ। অন্যান্য ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ার পর জকসুতে যৌথ প্যানেল গঠনের আলোচনা চলছে তাদের। দুই সংগঠন একত্র হয়ে লড়ার আকাঙ্খাতে আছে তারা। প্যানেল গঠনে ভালো একাডেমিক ও আন্দোলনে থাকা পরিচিত মুখও অন্তর্ভুক্ত করছে প্যানেলে।
শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব জানান, “ছাত্রশক্তির সঙ্গে আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে, তবে কিছু বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
ছাত্রশক্তির ইউনিটের আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। প্যানেলে নারী ও হিন্দু শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করবেন।”
জোট করবে সকল বাম সংগঠন
জকসু ঘিরে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোও একক প্যানেল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছে। অন্যান্য ক্যাম্পাসে একাধিক প্যানেল দেওয়ায় তারা ভরাডুবির সম্মুখীন হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, তারা এমন শিক্ষার্থীদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, যারা রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত না হলেও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। এছাড়া রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বাইরে, ক্যাম্পাসের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় শিক্ষার্থীরাও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীব বলেন, “আমরা আমাদের প্যানেলে সর্বোচ্চ অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করব। এতে বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন, নারী শিক্ষার্থী এবং আদিবাসী শিক্ষার্থীরাও থাকবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকেও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।”
এসকল রাজনৈতিক প্যানেলের বাইরে অবকাশ ভবনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক ও সেবামূলক সংগঠনের নেতৃত্বে একটি ভিন্নধর্মী প্যানেল গঠন হবার সম্ভাবনা আছে।
খসড়া আচারণবিধি প্রকাশ, ডোপটেস্টের সিদ্ধান্ত কমিশনের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপটেস্ট করে প্রার্থীতা যাচাই করবে নির্বাচন কমিশন। এতে মাদকাসক্ত প্রমাণিত হলে প্রার্থীতা বাতিল গণ্য হবে বলে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে খসড়া আচারণবিধি বিধিমালায় এসব নির্দেশনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
এছাড়া এই আচরণ বিধিতে বলা হয়েছে- কোনো প্রার্থী ফৌজদারি অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত হলে ভোটাধিকার ও প্রার্থিতা বাতিল হবে। কোনো শিক্ষার্থী শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও যৌন অপরাধ সংগঠিত অথবা এ জাতীয় অপরাধের শাস্তিপ্রাপ্ত হলে তিনি ভোটাধিকার হারাবেন এবং নির্বাচনের প্রার্থীতা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
নির্বাচনী এই আচরণ বিধিতে আরো বলা হয়েছে- কোনো প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে যুক্ত থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত হলে শাস্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে ওই শিক্ষার্থীর শাস্তি ভোগের মেয়াদ শেষ হলে এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীর মর্যাদা ফিরে পেলে তিনি নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অধিকার ফিরে পাবেন। কোনো শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য বলে গণ্য হবে। এছাড়া কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শ্রেণিকক্ষে বা পরীক্ষার হলরুমে কোনো নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। নির্বাচনের আচরণ-এ বিধিমালায় ক্যাম্পাসে যে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একজন প্রার্থী হল সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ও কেন্দ্রীয় সংসদে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবে। এছাড়া ভোটারদের কোনো রকম পানীয়, খাদ্য পরিবেশন বা কোনোরূপ উপঢৌকন দিতে পারবেন না। এবং নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হরণমূলক বক্তব্য, বিদ্বেষমূলক, উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে পারবে না বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া আরো নানাবিধ নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সার্বিক বিষয়ে জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, রবিবার আমাদের একটা মিটিং আছে। ডোপটেস্টের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। আমরা নির্বাচনের কোনো ডেট এখনো নির্ধারণ করিনি। আলোচনার ভিত্তিতে তফসিল হবে।