ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের বেশিরভাগই ভারতীয় মুসলমান

‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের বেশিরভাগই ভারতীয় মুসলমান

ভারতের গুজরাটে সম্প্রতি ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ সন্দেহে ছয় হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে রাজ্য পুলিশ। তবে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশি নন, বরং তারা ভারতীয় মুসলমান।

সংবাদসংস্থা পিটিআইকে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল বিকাশ সহায় জানিয়েছেন, তাদের (আটককৃত) মধ্যে মাত্র ৪৫০ জনের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের নথিপত্র দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিকাশ সহায় বলেন, নথিভিত্তিক যাচাইয়ে এখন পর্যন্ত ৪৫০ জনকে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা মনে করি আরও অনেককে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) ভোররাত থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান প্রথমে আহমেদাবাদ ও সুরাত শহরে চালানো হয়, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা গুজরাটে। ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ সন্দেহে যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেরই ভারতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।

আটককৃতদের একজন সুরাতের বাসিন্দা সুলতান মল্লিক, যিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুরের বাসিন্দা এবং দীর্ঘ ছয় বছর ধরে সুরাতে এমব্রয়ডারির কাজ করেন, তাকেও বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে গুজরাট পুলিশ।

বিবিসি বাংলাকে তার স্ত্রী সাহিনা বিবি বলেন, রাত ৩টায় পুলিশ আসে। আধার কার্ড দেখতে চায়। তারপর আমার স্বামী ও দুই ভাগ্নেকে নিয়ে যায়। তারা বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে, কিন্তু তিনদিন পেরিয়ে গেল- আর কোনো খোঁজ নেই।

বিবিসির কাছে মি. মল্লিকের ভারতীয় পাসপোর্ট ও ১৯৯৩ সালের জমির দলিলের কপি রয়েছে, যা তার ভারতীয় পরিচয় প্রমাণ করে। তবুও পুলিশ এখনো তাকে আদালতে হাজির করেনি, যা আইনের লঙ্ঘন।

আহমেদাবাদে এক বিয়ের অনুষ্ঠানেও অভিযান চালায় পুলিশ। বরযাত্রী হিসেবে আসা কয়েকজনকে পুলিশ ধরেও নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে কেউই বাংলাদেশি নন, এমনকি বাংলাভাষীও নন।

বরযাত্রীদের একজন মিজ. ফারজানা বলেন, আমার ভাই আর ভাতিজা মহারাষ্ট্র থেকে এসেছিল। বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশ তাদের আটক করে। আমাদের কাছে সব নথি ছিল, তবুও সারাদিন না খেয়ে বসে থাকতে হয়েছে ক্রাইম ব্রাঞ্চে।

এছাড়া অনেক পুরোনো বাসিন্দা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদেরও আটকের মাধ্যমে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।

অনেকে প্রশ্ন তুলছেন যে, বাংলাভাষী ও মুসলমান হলেই কি নাগরিক অধিকার খর্ব হবে? এরা কি ভারতের অন্য কোথাও কাজ করতে পারবে না?

গুজরাট পুলিশ দাবি করছে, আধার বা ভোটার আইডি কার্ড থাকলেই কেউ ভারতীয় তা নিশ্চিত নয়, কারণ এসব নথি নকল হতে পারে। এজন্য তারা সীমান্তবর্তী রাজ্য থেকে তদন্তকারী দল আনছে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার আড়ালে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায়ভিত্তিক নজরদারি চালানো হচ্ছে।

বাংলাদেশি,ভারতীয় মুসলমান
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত