ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ওপরের হাত শ্রেয়

আবদুল কাইয়ুম শেখ
ওপরের হাত শ্রেয়

আল্লাহর পথে দান করা দাতার রিজিক বৃদ্ধির কারণ। যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাহলে আল্লাহ তাকে প্রচুর প্রতিদান দেন। তার রিজিক বৃদ্ধি করেন। সম্পদে ভরপুর বরকত দান করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাতকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭৬)। কোনো ব্যক্তিকে ধার দেওয়া হলে সেই ব্যক্তি অনুরূপ বস্তু ফিরিয়ে দেয়। অনেক সময় ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা ও কালক্ষেপণ করে। কিন্তু আল্লাহকে ধার দেওয়া হলে অর্থাৎ তার পথে ব্যয় করা হলে তিনি দাতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। তার সম্পদ বিপুল পরিমাণে বর্ধিত করে ইহ বা পরকালে ফিরিয়ে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘এমন কে আছে, যে আল্লাহকে করজ দেবে, উত্তম করজ। অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন। আর তাঁরই কাছে তোমরা ফিরে যাবে।’ (সুরা বাকারা : ২৪৫)।

বিপদ থেকে মুক্তি : মানুষের অন্যায়, অনাচার ও পাপাচারের কারণে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। পরাক্রমশালী আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া ছাড়া উপায় নেই। তাছাড়া প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন দুর্ঘটনা দেখি, দুঃসংবাদ শুনি ও বিপদাপদের শিকার হই। আল্লাহর অসন্তুষ্টি, বিপদাপদ ও মন্দ মৃত্যু থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কার্যকর উপায় হলো আল্লাহর পথে দান করা। দান-খয়রাতের মাধ্যমে বিপদাপদ ও বালা-মসিবত দূর হয়। সঙ্গে সঙ্গে অকাল মৃতুও রোধ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দান-খয়রাত আল্লাহর অসন্তুষ্টি কমিয়ে দেয় এবং মন্দ মৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি : ৬৬৪)।

পাপ মোচন : প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের অন্যায়-অপরাধ, ভুল-ভ্রান্তি ও পাপ-পঙ্কিলতা হয়েই যায়। এসব পাপের ক্ষতি ও পরিণতি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার এবং সব ধরনের গোনাহ মোচন করার অন্যতম উপায় হলো, আল্লাহর পথে দান করা। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। আল্লাহ তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দেবেন। তিনি তোমাদের কাজকর্মের খবর রাখেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭১)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা নেক আমলসমূহ খেয়ে ফেলে, যেমন আগুন জ্বালানি কাঠ খেয়ে ফেলে। দান-খয়রাত গোনাহসমূহ বিলীন করে দেয়, যেমন পানি আগুন নেভায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪২১০)।

সাতশ গুণ প্রতিদান : আল্লাহর পথে এক টাকা দান করা হলে সাতশ টাকা দান করার সওয়াব পাওয়া যায়। এমনকি আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কোরআন-হাদিসে উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো; যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা : ২৬১)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোনো কিছু দান করবে, তার জন্য সাতশ গুণ সওয়াব লেখা হবে।’ (সুনানে নাসাঈ : ৩১৮৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে লোক তার হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণও দান করে, আল্লাহ তা তাঁর ডান হাত দ্বারা কবুল করেন। আর পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া আল্লাহর কাছে কোনো কিছু পৌঁছে না। তারপর এটি তার মালিকের জন্য লালন-পালন ও পরিচর্যা করতে থাকে, তোমরা যেমন ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন-পালন করতে থাক। অবশেষে তা পর্বতের মতো বিরাট আকার ধারণ করে।’ (বোখারি : ৭৪৩০)।

আল্লাহর ছায়ায় আশ্রয় : দানকারী সবচেয়ে বড় যে পুরস্কার পাবে, তা হলো- আল্লাহর ছায়াতলে অবস্থান করার সুযোগ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তাঁর একজন সেই ব্যক্তি, যে গোপনে এমনভাবে দান করে যে, তার ডান হাত যা দান করে, বাম হাত তা জানতে পারে না।’ (বোখারি : ১৪২৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘দান অবশ্যই কবরবাসীর কবরের উত্তাপ ঠান্ডা করে দেয় এবং মোমিন ব্যক্তিকে কেয়ামতে আল্লাহর ছায়ায় অবস্থান করায়।’ (সুনানে বায়হাকি : ৩৩৪৭)।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা

আবদুল কাইয়ুম শেখ,দান-খয়রাত,রিজিক বৃদ্ধি,ইহকালীন সুফল,পরকালীন প্রতিদান,ওপরের হাত
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত