অনলাইন সংস্করণ
১৭:১৯, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
মুসলমানদের জীবনে দরুদ শরিফের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রকাশের অন্যতম উপায় হলো তাঁর জন্য দুরুদ পাঠ করা। কোরআনেই আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। হে ঈমানদারগণ, তোমরা তাঁর প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করো।’ (সুরা আহজাব : ৫৬)।
একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহতায়ালা ১০টি রহমত নাজিল করেন। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ১০টি রহমত বর্ষণ করেন।’ (তিরমিজি : ৪৮৫)। আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা তাঁর ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করবেন, তাঁর ১০টি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর জন্য ১০টি মর্যাদা উন্নীত করা হবে।’ (নাসায়ি : ১২৯৭)। যে ব্যক্তি নবী (সা.)-এর নাম শুনে দরুদ পাঠ করল না; তার প্রতি আল্লাহর রাসুল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার নবী (সা.) মিম্বরে ওঠার সময় তিনবার আমিন বলেন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি মিম্বরে উঠলেন আর বললেন, আমিন-আমিন-আমিন। তিনি বলেন, জিবরাইল আমার কাছে এসে বলল, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি, সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন আমিন। আমি বললাম, আমিন। যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় তার মা-বাবা কিংবা তাদের একজনকে পেল, আর তাদের সেবাযত্ন করল না; এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করল। সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ তাআলাও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন, আমিন; আমি বললাম, আমিন। আর যার কাছে আপনার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আপনার ওপর দরুদ পাঠ করল না; অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন, আমিন। আমি আমিন বললাম। (ইবনে হিব্বান : ৯০৭)। সাহাবায়ে কিরাম, তাবেইন এবং আলেমরা অসংখ্য দরুদ শরিফ বর্ণনা করেছেন। এখানে আমরা ১০টি সুপরিচিত দরুদ তুলে ধরছি- যার মধ্যে কিছু ছোট, আবার কিছু তুলনামূলক দীর্ঘ; তবে প্রতিটিই হৃদয়কে প্রশান্তি দেয় এবং আমলকারীর জন্য বরকতের ভাণ্ডার হয়ে ওঠে।
১. দরুদে ইবরাহিম : সর্বাধিক পরিচিত দরুদ হলো দুরুদে ইবরাহিম। বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মজিদ।’
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি যেমন ইবরাহিম ও তাঁর পরিবারকে রহমত করেছেন, তেমনি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারকে রহমত করুন। আর যেমন ইবরাহিম ও তাঁর পরিবারকে বরকত দিয়েছেন, তেমনি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারকে বরকত দিন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও মহান। (বোখারি : ৩৩৭০)।
২. সংক্ষিপ্ত দরুদ : বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া সাল্লিম।’ বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন। (তিরমিজি : ৩১৪)।
৩. দরুদে সালাম : বাংলা উচ্চারণ : ‘আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’
বাংলা অর্থ : হে নবী, আপনার ওপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। (বোখারি : ৮৩১)।
৪. দরুদে উম্মি নবী : বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন নাবিইয়িল উম্মিইয়ি।’
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, উম্মী নবী মুহাম্মদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব : ১৬৫৪)।
৫. দরুদে বারাকাহ : বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।’
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারে রহমত করুন এবং বরকত দিন। (মুসনাদে আহমদ : ১৬৯৯১)।
৬. দরুদে আবরার : বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসূলিকা ওয়াসাল্লি আলাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা।’
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, আপনার বান্দা ও রাসুল মুহাম্মাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন এবং সব মুমিন ও মুসলিমদের ওপর রহমত করুন। (ইবনে হিব্বান : ৯০৩)।
৭. দরুদে মাসনুন : বাংলা উচ্চারণ : ‘সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ।’
বাংলা অর্থ : আল্লাহ মুহাম্মাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। (নাসায়ি : ১৭৪৬)।
৮. দরুদে কামিল : বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদিন তিব্বিল কুলুবি ওয়া দাওয়াইহা, ওয়া ‘আফিয়াতিল আবদানি ওয়া শিফাইহা, ওয়া নুরিল আবসারি ওয়া জিয়াইহা, ওয়া আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া সাল্লিম।’
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, আমাদের নেতা মুহাম্মাদের ওপর রহমত করুন, যিনি অন্তরের আরোগ্য ও রোগের প্রতিকার, শরীরের সুস্থতা, চোখের আলো ও উজ্জ্বলতার উৎস। তাঁর পরিবার ও সাহাবাদের ওপরও রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন। (দালাইলুল খাইরাত, প্রকাশনী : দারুস সালাম, রিয়াদ, ২০১৫, পৃষ্ঠা : ৪৫)।
৯. দরুদে মাকাম মাহমুদ : বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আনজিলহুল মাকআদাল মুকাররাবা ইন্দাকা ইয়াওমাল কিয়ামাহ।’
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, মুহাম্মাদের ওপর রহমত করুন এবং কিয়ামতের দিনে তাঁকে আপনার নৈকট্যপ্রাপ্ত উচ্চ আসনে বসান। (মুসনাদে আহমদ : ১৬৯৯১)।
১০. দরুদে আনওয়ার : বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা নুরিল আনওয়ার, সি?ররিল আসরার, তিরইয়াকিল আগইয়ার, মিফতাহি বাবিল ইয়াসার, সাইয়িদিল আবরার।’
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, আলোসমূহের আলো, রহস্যসমূহের রহস্য, বিপদের ওষুধ, সহজতার দরজার চাবি, সৎ ব্যক্তিদের নেতা মুহাম্মদের ওপর রহমত করুন। (দালাইলুল খাইরাত, প্রকাশনী : দারুস সালাম, রিয়াদ, ২০১৫, পৃষ্ঠা : ৬২)।
ছোট দরুদ যেমন ‘সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ’- সহজেই যেকোনো কাজের ফাঁকে পড়া যায়। আর দীর্ঘ দরুদ যেমন দরুদে ইবরাহিম, নামাজে এবং বিশেষ ইবাদতের সময়ে পড়া যায়। জুমার দিন শুক্রবার দরুদ পাঠ বেশি করার নির্দেশও হাদিসে এসেছে। (নাসায়ি : ১৩৭৪)।
ছোট বা বড়- প্রতিটি দরুদই অমূল্য সম্পদ। আসুন, প্রতিদিন অন্তত কয়েকবার দরুদ পাঠ করার অভ্যাস করি।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক