ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

প্রথম নারী হাওয়া (আ.)-এর জন্ম যেভাবে

প্রথম নারী হাওয়া (আ.)-এর জন্ম যেভাবে

আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন। ফেরেশতাদের জানালেন। তারা বললেন, ‘আমরা তো আপনার প্রশংসা করছি। মানুষ পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা করবে। এর আগে যেমন জিনরা বিশৃঙ্খলা করেছিল।’ মানুষ সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে পৃথিবীতে জিন জাতির বসবাস ছিল। পৃথিবীর সবখানে তারা ফিতনা ছড়াতে থাকে। পরে আল্লাহর আদেশে ফেরেশতারা তাদের পিটিয়ে সমতল ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে সমুদ্রের বিভিন্ন দ্বীপে পাঠিয়ে দেন। (মুসতাদরাকুল হাকিম : ৩০৩৫)।

আল্লাহ মানুষ বানালেন। প্রথমে বানালেন আদম (আ.)-কে। ফেরেশতারা তাকে সিজদা করলেন। জান্নাতেই থাকতেন তিনি। একাকী। তার কোনো সঙ্গী বা স্ত্রী ছিল না, যার কাছে তিনি ভালোবাসা পেতে পারেন, কথা বলতে পারেন, একাকিত্ব ঘোচাতে পারেন, প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। তিনি চাইতেন, একজন সঙ্গী হোক। কথা বলার মানুষ হোক।

একদিন আদম (আ.) ঘুমিয়ে ছিলেন। জেগে উঠে দেখতে পেলেন, একজন নারী বসে আছেন তার মাথার কাছে। এর আগে তিনি এমন অবয়ব বা মানুষ দেখেননি কোনোদিন। পরিচয় জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, ‘আমি নারী।’ জানতে চাইলেন, ‘তোমাকে সৃষ্টির কারণ কী?’ বললেন, ‘আপনার প্রশান্তির জন্য।’

আল্লাহ সুরা নিসার ১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দুজন থেকে বহু নারী-পুরুষ ছড়িয়ে দেন।’ এ আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়, আল্লাহতাআলা হাওয়া (আ.)-কে আদম (আ.) থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখানে দুই ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে। ১. আল্লাহতাআলা পুরুষের সঙ্গে তারই স্বজাতীয় অপর এক নারী সৃষ্টি করেছেন, যে পুরুষের জীবনসঙ্গিনী হয়ে থাকে। ২. হাওয়া (আ.)-কে আদম (আ.)-এর পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। (কাসাসুল কোরআন, খণ্ড : ১, পৃ : ৪০)। তাফসিরবিদরা প্রথম ব্যাখ্যাকেই সমর্থন করছেন। এর সারমর্ম হলো, নারী জাতি পুরুষেরই স্বজাতীয় এবং একইভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।

নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টির কথা বলা আছে হাদিসে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং হাড়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বাঁকা হাড় হলো এটা (আর তা থেকেই নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে)। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের উত্তম উপদেশ দিতে থাকো।’ (বোখারি : ৫১৮৫)।

আদম ও হাওয়া (আ.)-এর বসবাস শুরু হলো জান্নাতে। তারা সেখানে একসঙ্গে থাকতে লাগলেন। তাদের জন্য অফুরন্ত নেয়ামতের ব্যবস্থা ছিল সেখানে। তারা নেয়ামতের মধ্যে ডুবে ছিলেন। ইচ্ছামতো ঘুরতেন। পছন্দমতো খেতেন। আনন্দ-বিনোদন করতেন। এরমধ্যে আল্লাহ একটি গাছ দেখিয়ে বললেন, ‘তোমরা এর কাছে যেয়ো না।’ পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি বললাম, হে আদম, তুমি তোমার সঙ্গিনীকে নিয়ে জান্নাতে বাস করো এবং যেখানে ইচ্ছা যাও বা যা ইচ্ছা খাও, কিন্তু ওই গাছের কাছে যেয়ো না, গেলে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আরাফ : ১৯)।

এদিকে ইবলিস তাদের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। প্রথম দিন থেকেই সে আদমকে শত্রু ভেবে নিয়েছে। আদমের কারণে সব কিছু হারিয়েছে সে। তাকে ধোঁকায় ফেলা তার একমাত্র ভাবনা। সে চেষ্টা করেই চলল। কোনোভাবেই আদমকে জালে ফেলতে পারল না। জালে ফেলতে চাইল এবার হাওয়া (আ.)-কে। হাওয়াকে আল্লাহর নিষিদ্ধ গাছের কাছে নিয়ে গেল। ফাঁদে পড়ে গেলেন হাওয়া। আদম (আ.)-কে নিয়ে খেয়ে ফেলেন নিষিদ্ধ সেই গাছের ফল- আল্লাহ যা নিষেধ করেছিলেন। সীমালঙ্ঘন করায় আল্লাহ তাদর দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেন। শুরু হলো পৃথিবীতে মানুষের বসবাস। এটাই ছিল আদমের প্রতি আল্লাহর প্রথম শাস্তি।

হাওয়া (আ.),জন্ম
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত