ঢাকার উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর সপুরা গোরস্তানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজার আগে মরদেহবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সটি নেয়া হয় তার রাজশাহীর বাসায়। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় জানাজা। এতে অংশ নেন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, আত্মীয়-স্বজন ও সাধারণ মুসল্লিরা।
জানাজার আগে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করা হয় এবং পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন তার বাবা তহুরুল ইসলাম ও মামা মতিউর রহমান।
বক্তব্যে আবেগতাড়িত তহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সেই হতভাগ্য পিতা, যে নিজের সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়েছি।’ এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান। একই সঙ্গে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত অন্যান্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সকলের জন্যও দোয়া কামনা করেন।
এর আগে, দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে তৌকিরের মরদেহ ঢাকা থেকে রাজশাহী সেনানিবাসে আনা হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৩টা ২০ মিনিটে মরদেহ তার উপশহরের বাসায় নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে জানাজার উদ্দেশ্যে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে।
তৌকির ইসলাম সাগর ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সন্তান। তবে পরিবারসহ তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীতেই বসবাস করতেন। শৈশব ও কৈশোর কাটে রাজশাহীতেই। রাজশাহী ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন তিনি। ২০১৪ সালে এসএসসি ও ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করার পর যোগ দেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে।
প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত ধাপে থাকা অবস্থায় গত সোমবার (২১ জুলাই) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির একা যুদ্ধবিমান উড়ানোর দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু সে দিনই ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা—তার বিমানটি ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর আছড়ে পড়ে। এ ঘটনায় তিনি নিহত হন। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রয়েছেন।
মাত্র এক বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তৌকির। তার স্ত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।