
মাছ চাষ করতে গিয়ে নিরাপদ ফিডের প্রয়োজন হয়, তাই নিরাপদ ফিড নিশ্চিত করতে হবে। ফিড যদি নিরাপদ না হয় তাহলে যে মাছটা উৎপাদিত হচ্ছে সেটা ভোক্তার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। তাই অনিরাপদ ফিড যাতে বাজারে না আসে সেদিকে নজর রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে মৎস্য অনুষদ আয়োজিত আন্তর্জাতিক মৎস্য সম্মেলন এবং প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ময়মনসিংহে বেশি মাছ চাষ হলেও রাজশাহীর অবদানও কম নয়। রাজশাহী থেকে দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ মাছ সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বাংলাদেশে মাছ উৎপাদন দুইভাবে হয়ে থাকে। একদিকে নদী, খাল-বিল, হাওর, বাওর থেকে, অপরদিকে মৎস্যচাষের মাধ্যমে। দুটো পদ্ধতিই গুরুত্বপূর্ণ। মৎস্যচাষ নিজের গুণেই এগিয়ে যাচ্ছে। অ্যাকুয়াকালচার মাধ্যমে মৎস্যচাষের কারণে বাজারে মাছের সরবরাহ বেড়েছে, ফলে সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী দামে মাছ খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তার মানে এই নয় যে, আমরা প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছ ধরবো না, খাবো না।
তিনি বলেন, মাছ রপ্তানি হতেই হবে। যেসব দেশে মাছ রপ্তানি করবেন সেসব দেশেও বাঙালি আছে। আপনার এই মাছটি তারাই খাবে। প্রবাসীরা কষ্ট করে আমাদের রেমিট্যান্স পাঠায়, অথচ তারা যদি মাছ না পায় সেটা দুঃখজনক ব্যাপার। আমি মনে করি আমাদের রপ্তানির সুযোগ অবশ্যই তৈরি করতে হবে। এসময় তিনি কাপ জাতীয় মাছ রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ফরিদা আখতার বলেন, আপনারা প্রায় ৬০০ জন মৎস্যচাষীর নিবন্ধনের মাধ্যমে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সবাই একত্র হয়েছেন। এখানে যা আলোচনা হবে তার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নীতিনির্ধারকদের মাধ্যমে সমাধান বের করা সহজ হবে। এসময় তিনি মৎস্যচাষীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।
মৎস্য চাষের ফিড নিরাপদ কি না, প্রশ্ন তুলে উপদেষ্টা বলেন, মাছ চাষ করতে গিয়ে নিরাপদ ফিডের প্রয়োজন হয়, তাই নিরাপদ ফিড নিশ্চিত করতে হবে। ফিড যদি নিরাপদ না হয় তাহলে যে মাছটা উৎপাদিত হচ্ছে সেটা ভোক্তার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। তাই অনিরাপদ ফিড যাতে বাজারে না আসে সেদিকে নজর রাখতে হবে। নিরাপদ ফিডের পাশাপাশি মাছের জন্য নিরাপদ ওষুধও নিশ্চিত করতে হবে।
মাছের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কপ সম্মেলনেও সারাবিশ্বে মাছ উৎপাদন নিয়ে উদ্বেগ দেখা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশেষ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে পুকুরের মাছগুলো বেশি তাপ সহ্য করতে না পেরে মারা যাচ্ছে। তাই সেটার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা শিখতে হবে এবং মাছকে বাঁচার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মৎস্যচাষ নীতি প্রণয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব। এটা হলে চাষী হিসেবে করণীয় বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে। এ নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান সহজ হবে। এসময় তিনি ইলিশ রক্ষা এবং পুকুর সংস্কারের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি মৎস্যচাষীদের কৃষিজমিতে পুকুর খনন করে মৎস্যচাষ না করে অনাবাদী জমিতে পুকুর খনন করে মৎস্যচাষের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে কীনোট উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মো. আক্তার হোসেন।
অধিবেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদের ডিন ও সামিট আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মণ্ডলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. আ. ন. ম. বজলুর রশীদ এবং মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুর রউফ।
অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন নাবিল গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও কৃষিবিদ মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস কে কামরুল আলম, সামিট আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব ড. অক্ষয় কুমার সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ প্রমুখ।