আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশনা দেন। এদিন ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস: কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রদান ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আর খুব বেশি নেই—প্রায় ৪৫ দিন সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর করতে প্রশিক্ষণসহ যেসব প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা বিজিবিকে নিতে হবে। নির্বাচনকে উৎসবমুখর করার ক্ষেত্রে বিজিবির বড় দায়িত্ব রয়েছে এবং তারা এই দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিন বক্তব্যের শুরুতে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ছাত্র-জনতার অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বিজিবি একটি সুদীর্ঘ ও গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক বাহিনী। বর্তমানে বিজিবি একটি ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে দেশের সীমান্ত সুরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা এবং জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাহিনীর উন্নয়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান তিনি।
সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সীমান্ত দিয়ে কোনো মাদক দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না এবং স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। একইভাবে অবৈধ পথে দেশীয় পণ্য পাচার রোধে কঠোর নজরদারি বজায় রাখতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত কৌশলী ও যোগ্যতার পরিচয় দিতে হবে। দেশের স্বার্থ শতভাগ রক্ষা করতে হবে।
মাদক ও চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, কোনো কর্মকর্তা বা সদস্য যদি পাচারকারীদের সহায়তা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে—এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি অধীনস্থ কমান্ড ও সদস্যদের কল্যাণের প্রতি নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ডিসিপ্লিন, ট্রেনিং ও ওয়েলফেয়ার—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে চলতে হবে। প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না। পাশাপাশি আন্ডার কমান্ড সদস্যদের সমস্যা শোনা ও দ্রুত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, সীমান্ত ব্যবহারকারী চোরাকারবারিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সীমান্তে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সীমান্ত ব্যবহার করে কোনো অপরাধী বা সন্ত্রাসী যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তিনি বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, ‘চেইন অব কমান্ড’-এর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও আনুগত্য বজায় রাখবেন। সীমান্ত রক্ষার পবিত্র দায়িত্বের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার যেকোনো দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করবেন।
তিনি বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘চেইন অব কমান্ড’-এর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও আনুগত্য বজায় রেখে সীমান্ত রক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সততা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করতে হবে।
বিজিবি ভবিষ্যতেও ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে বিজিবি তার গৌরবময় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে—এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিজিবি সদস্যরা।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি শাহাদতবরণ করায় সরকার ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। সে কারণে বিজিবি দিবসের নির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করা হয় এবং পরবর্তীতে ২৯ ডিসেম্বর দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
