ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শেখ রেহানার জন্মদিন: ‘দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে-নিভৃতে’

শেখ রেহানার জন্মদিন: ‘দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে-নিভৃতে’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই একাধিকবার বক্তৃতায় বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণের ক্ষেত্রে বঙ্গমাতা মুজিবের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তিনিই জাতির পিতাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তার মনে যা আসে তা বলার জন্য। ঠিক একইভাবে শেখ হাসিনাকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন শেখ রেহানা। শেখ রেহানাই হলেন শেখ হাসিনার অভিভাবক। শেখ রেহানা বয়সে শেখ হাসিনার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও একজন অভিভাবকই বটে। তিনি শেখ হাসিনাকে শাসন করেন, পরামর্শ দেন, নিশঙ্কচিত্তে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ান।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রেরণাময়ী সহোদরা শেখ রেহানার ৬৬ তম জন্মদিন আজ। ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবোন শেখ রেহানাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে আশীর্বাদ করেছেন তার বড়বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন সাধারণের মতোই জীবনযাপন করেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। একদম সাদাসিধে একজন নারী। চরিত্রে অহংকার পোষণ করেননি। দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে-নিভৃতে।

সংগ্রাম করে যাচ্ছেন জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে। সুযোগ্য মায়ের যোগ্য উত্তরসূরি তিনি। মা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব পর্দার অন্তরালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন সাহস ও অনুপ্রেরণা। যার অনুপ্রেরণায় শেখ মুজিব হতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর এখন পর্দার অন্তরালে বড় বোন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি হলেন শেখ রেহানা, জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা।

শেখ রেহানার ইতিবাচক ভূমিকার কারণেই শান্তির আলোকবর্তিকা হাতে বিশ্বময় শেখ হাসিনা। শেখ রেহানা বেগম মুজিবের পরিপূরক হয়ে উঠেছেন তার কর্মে এবং যোগ্যতার মাপকাঠিতে। শেখ রেহানার জীবনালেখ্য নিয়ে হয়ত বেশি কিছু জানা যায়নি, তবে জীবনের গভীরতা অনুধাবন করা যায় ব্যাপকভাবে। কারণ, তার সাদামাটা জীবনচরিত এবং অতিথিপরায়ণতা সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে ঘরোয়া আলোচনায় বলেন যে, শেখ রেহানা ছাড়া তিনি অচল, শেখ রেহানা ছাড়া তিনি পরিপূর্ণ নন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দুঃসময়ে, বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তিনি যেন আশা-ভরসার স্থান। বিশেষ করে শেখ রেহানার কথা উচ্চারিত হলে ২০০৭-এর ওয়ান ইলেভেনের কথা দৃশ্যপটে সামনে চলে আসে। সেসময় আওয়ামী লীগকে বিভক্তির হাত থেকে বাঁচাতে, শেখ হাসিনার মুক্তির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে এবং আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে শেখ রেহানাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

যদিও তিনি রাষ্ট্রীয় কোনো পদ বা কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার সঙ্গে পরামর্শ করেন। শেখ হাসিনা ছোটবোন শেখ রেহানার মধ্যে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ছায়া দেখতে পান। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাংলাদেশের মুক্তির আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ছয় দফা থেকে শুরু করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৭৯-এর গণ-আন্দোলনে জীবন বাজি রেখেছিলেন বাঙালির মুক্তির জন্য- সেসময় বঙ্গবন্ধুকে আগলে রেখেছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব।

বিশেষ করে, সেসময় আওয়ামী লীগের সব ধরনের সংকটে বঙ্গমাতার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সাহসী এবং সপ্রতিভ। প্যারোলে মুক্তি নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গমাতার। আওয়ামী লীগ যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে সংকটে নিপতিত, দলের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাকর্মী যখন কারান্তরীণ, তখন বঙ্গমাতাই আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থেকেও দলকে আগলে রেখেছিলেন। নেতাকর্মীদের সহায়তা করেছিলেন এবং আন্দোলনের জন্য দলকে সংগঠিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনই কোনো পদে ছিলেন না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই একাধিকবার বক্তৃতায় বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণের ক্ষেত্রে বঙ্গমাতা মুজিবের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তিনিই জাতির পিতাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তার মনে যা আসে তা বলার জন্য। ঠিক একইভাবে শেখ হাসিনাকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন শেখ রেহানা। শেখ রেহানাই হলেন শেখ হাসিনার অভিভাবক। শেখ রেহানা বয়সে শেখ হাসিনার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও একজন অভিভাবকই বটে।

তিনি শেখ হাসিনাকে শাসন করেন, পরামর্শ দেন, নিশঙ্কচিত্তে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ান। রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষ, দূরদর্শী হলেও ব্যক্তিজীবনে তিনি নিজের প্রতি মোটেও যত্নশীল নন। প্রায়ই তিনি তার ওষুধপথ্য খেতে ভুলে যান, খাওয়া-দাওয়াও সময়মতো করেন না। সারাক্ষণই দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতে গিয়ে নিজে বেছে নিয়েছেন এক অগোছালো জীবন। কিন্তু এখানে তাকে শাসন করেন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা যার বকুনির ভয় করেন, তিনিও শেখ রেহানাই।

কিন্তু যারা শেখ রেহানাকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন তারা জানেন যে, তিনি মূলধারার রাজনীতিতে কখনও যুক্ত হতে আগ্রহী নন। তিনি একজন ‘রত্নগর্ভা মা’ও বটে। তিনি তার তিন সন্তানকে সঠিক উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তাদের মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিক ইতোমধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একজন গুরুত্বপূর্ণ এমপি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি একজন গবেষক এবং চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে এর মধ্যেই পাশ্চাত্যে সাড়া ফেলেছেন। শেখ রেহানা এখন নিজেই বলেন, যে এখন আমার অবসরের সময়। শেখ হাসিনার পাশে থাকা, তাকে নিঃস্বার্থ পরামর্শ দেয়া ছাড়া তার কোনো কাজ নেই বলেই তিনি তার ঘনিষ্ঠদের বলেন।

শেখ রেহানা এক স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, “ছোটবেলায় দেখতাম, আব্বা প্রায়ই থাকতেন জেলখানায়। আমদের কাছে ঈদ ছিল তখন, যখন আব্বা জেলখানার বাইরে থাকতেন, মুক্ত থাকতেন। আব্বাও জেলের বাইরে, ঈদ এলে এমন হলে তো কথাই নেই। আমদের হতো ডাবল ঈদ।”

নিরহংকারের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ শেখ রেহানা। বোন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী অথচ চরিত্রে তার কোনো লেশ নেই। পাবলিক গাড়িতে করে নিজের অফিসে আসা-যাওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি আমরা। ব্রিটেনের যেকোনো বাঙালি নাগরিক শেখ রেহানার কাছে নিমেষেই যেতে পারেন। কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহের দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি পাথেয় হয়ে থাকবেন। একবার ভাবা যায়, নিজের বোন প্রধানমন্ত্রী অথচ তিনি অন্যের অফিসে কাজ করেন।

সততার এমন দৃষ্টান্ত বিরল এবং শেখ রেহানা তা স্থাপন করেছেন। মানবিক মানুষ হিসেবে তিনি অনন্য। রোহিঙ্গাদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র সচক্ষে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কক্সবাজারের উখিয়ায় গিয়েছেন এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বোন শেখ হাসিনাকে সাহায্য করেছেন।

অভিভাবক হিসেবে তিনি অনন্য। শুধু কি তাই, প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েদের মানুষ করার ব্যাপারেও তিনি জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে বলতেন, আপা তুমি বড়, তাই তুমি রাজনীতিটা কর আর আমি তোমার ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করি। আজকে শেখ হাসিনার ছেলেমেয়েরা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন এবং তার ফলাফল আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ।

আর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ অটিজম ধারণাটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পেয়েছেন। এসব কৃতিত্বের ভাগীদার শেখ রেহানাও। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে সংগ্রাম করে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়। রিফিউজি হিসেবে ছিলেন তিনি, তারপরেও টিকে ছিলেন জীবন সংগ্রামে।

’৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছিলেন, অসীম সাহস এবং সক্ষমতার পরিচয় দেখিয়ে তিনি অনেক জায়গায়ই সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।

এরপরও দুঃখ-কষ্ট তাকে, তাদের দুবোনের পরিবারকে তাড়া করে ফিরেছে। এখনও তো বাবা-মা-ভাই হারানোর বেদনা তাদের তাড়া করে বেড়ায়। যদিও পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে তারা অনেকটাই এখন সুখের পরশ পাচ্ছেন।

তিনি জাতির দুর্যোগ এবং ক্লান্তিলগ্ন অবস্থায় সব সময় সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন। অভিভাবক হিসেবেও তিনি অনন্য।

আমরাও ছোট আপার জন্মদিনে জানাই শুভেচ্ছা। সুস্থ ও সুন্দর কাটুক আগামী দিনগুলো। আজকের এই জন্মদিনে রেহানা আপাকে অভিনন্দন জানিয়ে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে চাই- “সন্ত্রাসের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান/ সঙ্কটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ/ মুক্ত করো ভয়/ আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়/ দুর্বলেরে রক্ষা করো, দুর্জনেরে হানো/ নিজেরে দীন নিঃসহায় যেন কভু না জানো/ মুক্ত করো ভয়/ নিজের ’পরে করিতে ভর না রেখো সংশয়।”

লেখক: সাংবাদিক

আওয়ামী লীগ,শেখ রেহানা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত