অনলাইন সংস্করণ
২০:১১, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলীয় অবস্থান, প্রশাসনে পক্ষপাতের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা, জুলাই সনদে স্বাক্ষর এবং নির্বাচনী প্রচার কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ভার্চুয়ালি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও ভোটগ্রহণ সংক্রান্ত কাজে একটি বিশেষ দলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরিতেও পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হচ্ছে এবং জামায়াত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, যা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরলে এ বিষয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
পাশাপাশি দু-এক দিনের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাবে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে। তবে এর আগে ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো চূড়ান্ত সনদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করছে দলটি। বিএনপির দাবি ও প্রস্তাবগুলো যদি সনদে প্রতিফলিত হয়, তাহলেই দলটি এতে স্বাক্ষর করবে।
আগামী ১৭ অক্টোবর শতাধিক নেতার সমন্বয়ে গঠিত বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। দলের পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ স্বাক্ষর করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকের সূত্র জানায়, বিএনপি নেতারা প্রশাসনের সাম্প্রতিক রদবদল ও নিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর প্রশাসনে পুনর্বিন্যাসের সময়ও একটি বিশেষ দলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। এতে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রশাসনিক প্রভাব এখনো রয়ে গেছে এবং নতুন সরকার সেই প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে তাঁরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ রাখা, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।
বৈঠকে মাঠপর্যায়ে প্রচার-প্রচারণার ঘাটতি নিয়েও আলোচনা হয়। নেতারা মনে করেন, প্রচারণায় আরও গতি আনতে হবে এবং মিডিয়া ও কমিউনিকেশন সেলকে আরও সক্রিয় করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর ন্যারেটিভের জবাব দিতে কৌশল নির্ধারণের বিষয়েও বৈঠকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি দলীয় প্রচারণা বাড়ানো ও জনসংযোগ জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার বিষয়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়, যদিও এটি এখনো চলমান প্রক্রিয়া। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী কমিটি ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর দিয়েছে, এবং তিনি শিগগিরই প্রার্থিতা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।
বিএনপি নেতারা বৈঠকে উল্লেখ করেন, সরকারের লক্ষ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা। তাই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এমন কাঠামো তৈরি করা যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হবে। অন্যথায় নির্বাচন নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠবে বলে তারা সতর্ক করেন।