ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জুলাই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে মতবিরোধ, দূরত্ব বাড়ছে জামায়াত-এনসিপির?

জুলাই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে মতবিরোধ, দূরত্ব বাড়ছে জামায়াত-এনসিপির?

নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে গতকাল (শুক্রবার) স্বাক্ষরিত হয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এতে স্বাক্ষর করেন। তবে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

এনসিপি আগেই স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্পষ্ট না হলে তারা স্বাক্ষর করবে না। একই ধরনের অবস্থান নিয়েছিল জামায়াতও। ফলে দুই দলের অবস্থানকে ঘিরে অনুমান করা হচ্ছিল—জামায়াতও হয়তো শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়াবে।

কিন্তু সব জল্পনা কাটিয়ে জামায়াত শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয় এবং হাসিমুখে সনদে স্বাক্ষর করে। আর এ সিদ্ধান্তেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান এনসিপি নেতারা। এতে করে দুই দলের মধ্যে নতুন করে মতবিরোধের রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইনগত ভিত্তির নিশ্চয়তা নিয়েই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন তারা। দলটির প্রত্যাশা এনসিপিও হয়তো শিগগিরই স্বাক্ষর করবে। তবে এনসিপি বলছে, আইনি ভিত্তি পেলেই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ফরিদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একটা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য যে পরিমাণ উৎসাহ, উচ্ছ্বাস দেখা গেলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এটা কিছুটা হতাশার। বাংলাদেশের জনগণকে একটা নতুন বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাওয়াটাই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান দায়িত্ব। সে জায়গাটা তারা কতটুকু পালন করতে পারলেন আর এনসিপি কতটুকু ইতিহাসের পক্ষে থাকলো বা ইতিহাসের ভুল পথে থাকলো সেটা আমার মনে হয় বিচারটা জনগণ করতে পারবে।’

সামাজিক মাধ্যমে এনসিপি নেতাদের বিভিন্ন মন্তব্যে বোঝা যায়, বিএনপির স্বাক্ষর নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া না থাকলেও, জামায়াতের স্বাক্ষর তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে।

ফরিদুল হক আরও বলেন, ‘জামায়াতও এটার সঙ্গে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। জামায়াতের নেতারা উচ্চকণ্ঠ ছিলেন যে, তারাও আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন না। এটা বলেছিলেন। শেষ মুহূর্তে তারা এটা কেন করলেন, তা তারাই ভালো জবাব দিতে পারবেন। তবে তাদের উচিত ছিল যে তারাও আসলে এ জিনিস নিশ্চিতের ব্যাপারে অনড় থাকতেন তাহলে জিনিসটা আরও গতি পেতো।’

অন্যদিকে, জামায়াত নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির গণমাধ্যমকে বলছেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দুই একদিনের মধ্যেই পাবে—এ আশায় স্বাক্ষর করেছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে শিশির মনির আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে একটা দেশ জারি হবে। ওই আদেশের ভিত্তিতে একটা গণভোট হবে। গণভোটের পর একটা সংসদ হবে। ওই সংসদের দুইটা ক্ষমতা থাকবে। প্রথম ক্ষমতা হবে তার সাংবিধানিক পাওয়ার আর দ্বিতীয় ক্ষমতা হবে তার সাধারণ সংসদ হিসেবে কাজ করার। তাহলে এ ধাপগুলো অতিক্রম করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর।’

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এনসিপির অনুপস্থিতি আর জামায়াতের উপস্থিতি নিয়ে যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে মূল্যায়ন জানতে চাইলে শিশির মনির বলেন, ‘পরবর্তী পদক্ষেপটা স্পষ্ট হলে এনসিপিও এখানে স্বাক্ষর করবে বলেই আমরা আশা করি। পরবর্তী পদক্ষেপটা ‍খুব দ্রুতই যদি স্পষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমার ধারণা আর কোনো মত পার্থক্য থাকবে না। এক্ষেত্রে জামায়াত এবং এনসিপির মধ্যে এটাকে কেন্দ্র করে কোনো দূরত্ব তৈরি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।’

জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে জামায়াত ও এনসিপির মধ্যকার মতানৈক্য আপাতদৃষ্টিতে কৌশলগত হলেও, এর রাজনৈতিক অভিঘাত অস্বীকার করার উপায় নেই। দুই দলের অবস্থান শুরুতে কাছাকাছি থাকলেও, শেষ মুহূর্তে ভিন্নমুখী সিদ্ধান্ত তাদের পারস্পরিক বিশ্বাস ও সমন্বয়ের অভাবই সামনে এনে দেয়। বিশেষ করে জামায়াতের স্বাক্ষর ও এনসিপির প্রত্যাহার—এই বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে: এই দুটি দল কি আদৌ দীর্ঘমেয়াদে একই কৌশলগত ছাতার নিচে থাকতে পারবে?

যদিও দুই পক্ষই দূরত্ব সৃষ্টির আশঙ্কা নাকচ করছে, বাস্তবতা হলো—রাজনীতিতে প্রতীকী সিদ্ধান্তও গভীর বার্তা বহন করে। জুলাই সনদ ভবিষ্যতের নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে, আর সেই কাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তরে কারা, কখন, কীভাবে যুক্ত হলো—তা রয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়। আর এর চূড়ান্ত রায় দেবে জনগণ।

জামায়াত,এনসিপি,মতবিরোধ,দূরত্ব,জুলাই সনদ,স্বাক্ষর,বিএনপি,আইনি ভিত্তি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত