ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দেশ ও জাতিকে রক্ষায় ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে: তারেক রহমান

দেশ ও জাতিকে রক্ষায় ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সামনের নির্বাচনে আমরা জনগণের রায় চাই, সমর্থন চাই। এ জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে। এর মাধ্যমেই দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে। এটা যদি করতে ব্যর্থ হই, তাহলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

বুধবার (ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

বিজয়ের মাস উপলক্ষ্যে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক আয়োজনে যুবদল ও কৃষক দলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।

তারেক রহমান বলেন, অতীতে দেশ যতবার বিপদে পড়েছে, ততবারই বিএনপি দেশকে রক্ষা করেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিবারই দেশ ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছিল। এবারও দেশকে বিএনপিই রক্ষা করবে।

ক্ষমতায় গেলে আইনশৃঙ্খলা কঠোর করা, ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু, প্রান্তিক মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পর্যায়ক্রমে ফ্যামিলি কার্ড প্রদান, কৃষকদের জন্য ফার্ম কার্ড, সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড, পরিবেশ রক্ষা ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাসহ দলের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, পত্রিকার পাতা খুললেই বহু ডিবেট (তর্ক) চলতে থাকে। এর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিবিদরা যাদের সাধারণ মানুষ হিসেবে গণ্য করে, তারাই এই ডিবেট শুনতে শুনতে বিরক্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখন মানুষ ক্লিয়ার ম্যাসেজ চায়। বিএনপি প্রকাশিত দেশ গড়ার পরিকল্পনার মতো করে অন্য রাজনৈতিক দল প্ল্যানিং দিতে পারেনি। একমাত্র বিএনপিই দিয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলা হবে। দেশের অর্ধেক পপুলেশন নারী। তারা কেন ঘরের মধ্যে থাকবে? বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রায় চার কোটি পরিবারের নারী প্রধানদের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দেওয়ার উদ্যোগ নেবে।

এই কার্ডের মাধ্যমে একজন নারী যে ভাতা পাবে, সেটি দিয়ে শিশুদের সুষম খাদ্য ও লেখাপড়ার খরচ মিটিয়েও কিছু টাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারবেন বলে তিনি আশা রাখেন। এভাবে ধীরে ধীরে পুরো পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।

কৃষি কার্ডের মাধ্যমে একজন কৃষক সার, বীজ, কীটনাশক ও কৃষিঋণের সুবিধা পাবেন বলেও জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এতে করে ধীরে ধীরে ওই কৃষক আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। পর্যায়ক্রমে দেশের সব কৃষককে কৃষি কার্ডের আওতায় আনা হবে। কৃষকের মেরুদণ্ড শক্তিশালী হলে কৃষি রপ্তানিতে আরও মনোযোগী হওয়া যাবে।

তিনি জানান, ১৯৮০ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানি হতো। আমাদের সেই ধারাবাহিকতায় ফিরে যেতে হবে।

দেশের স্বাস্থ্যখাতের নিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমাদের চিকিৎসা সেবার সক্ষমতার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ১ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে, যার ৮০-৮৫ শতাংশই হবে নারী। তাদের কাজ হবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করা। তাহলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমবে।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কর্মসংস্থানের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপায় নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ চলছে। তরুণ সমাজকে আরও সমৃদ্ধ করতে আইটি খাতকে সমৃদ্ধ করা হবে। দেশের স্কুল-কলেজ, ক্যাফে ও ক্যাম্পাসসহ সব স্থানে সরকারি উদ্যোগে ওয়াইফাই চালুর ব্যবস্থা করা হবে।

বিগত স্বৈরাচারের সময় মেগা প্রকল্প হলেও সেগুলোর উদ্দেশ্য সফল হয়নি বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের সময়ে আইটি পার্কের নামে বহু অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে এখন বিয়েশাদি মতো সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে করা হয়েছিল, তা সফল হয়নি।

মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাই বিএনপি নতুন করে মেগা প্রকল্পে যাবে না। কারণ দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থ জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতির পেছনে খরচ করতে হবে। সে জন্যই নতুন আইটি পার্ক বানানোর পরিকল্পনা নেই আমাদের। যেগুলো আছে, সেগুলোর সংস্কার করা হবে। তারপর তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যারা কাজ করতে চান, তাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া হবে।

কর্মসূচিতে উপস্থিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল ও কৃষক দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আর সময় নেই; যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে। এই যুদ্ধ হলো—মানুষের পক্ষে, মানুষের জন্য, দেশের পক্ষে, দেশের জন্য। এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হলে দেশ গড়ার পরিকল্পনা শুধু পরিকল্পনার মধ্যে রাখলে হবে না। জনগণকে সামনে নিয়ে বিগত দিনের আন্দোলনের মতো তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা দেশ গড়ার ৮টি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব। আমরা যে কাজ শুরু করব, পরবর্তী প্রজন্ম সেটা চালিয়ে নেবে।

তিনি আরও বলেন, দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা হবে। যদি আমরা ৪০ শতাংশও করতে পারি, তাতেও জনগণের ভাগ্যের শুভ পরিবর্তন ঘটবে।

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই কথাগুলো বিশ্বাস করে হৃদয় দিয়ে ধারণ করতে হবে। দেশ গড়ার পরিকল্পনা সবার কাছে পৌঁছানো হয়েছে। সেগুলো নিয়ে রেখে দিলে লাভ নেই। আপনার জেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা, গ্রাম ও সংগঠনসহ বিএনপির অন্যান্য নেতাকর্মীদের নিয়ে বসুন। আপনার এলাকা ও নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের সামনে দলের পরিকল্পনা তুলে ধরুন। তবেই এগুলো সফলতার মুখ দেখবে।

মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচারের সময়ে রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে। দল হিসেবে বিএনপি সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ আবারও নিরাপদে তাদের মতামত জানাতে পারবে।

তারেক রহমান বলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক জনগণ। বিএনপি চায়, মতামত প্রকাশের জন্য আবরার ফাহাদের মতো কেউ যেন আগামীতে হত্যাকাণ্ডের শিকার না হন।

তারেক রহমান,বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান,ধানের শীষ,দেশ,জতি,নির্বাচন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত