ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দিন শুরু চায়ে

সাধারণত সকালের নাশতার পরেই চা পানের উপযুক্ত সময়। সকালের নাশতার অন্তত ২০ মিনিট পর চা পান করলে তা সারাদিন চনমনে থাকতে সাহায্য করবে। লিখেছেন- গাজী মুনছুর আজিজ
দিন শুরু চায়ে

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্কের দিনে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ কাপ চা পান করা উচিত। শরীরকে চনমনে রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। তবে খালি পেটে চা পান করা উচিত নয়। টি অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ও ইউনাইটেড নেশনস ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের মতে, বিশ্বজুড়ে পানির পর সবচয়ে বেশি পান করা হয় চা। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, এমনকি ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, স্নায়বিক সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে চা। সাধারণত তিন ধরনের চা আমরা পান করি। তবে দুধ চা থেকে লিকার চা বা ব্ল্যাক টি ও গ্রিন টির উপকারিতা বেশি। বিশেষজ্ঞদের এ দুই প্রকার চা হার্টের পক্ষে খুব উপকারী। প্রাকৃতিক খনিজ উপাদানে ভরপুর এ চা পান করলে হৃদরোগের প্রবণতা কমে যায়।

অনেকেই যখন তখন চা পান করেন। আবার কারও কাছে সকালে বেড-টি উত্তম। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয় বেড-টি। সাধারণত সকালের নাশতার পরেই চা পানের উপযুক্ত সময়। সকালের নাশতার অন্তত ২০ মিনিট পর চা পান করলে তা সারাদিন চনমনে থাকতে সাহায্য করবে।

চা পানের অন্যতম বড় উপকারিতা হলো শরীরে পানির মাত্রা ঠিক থাকতে এটি সাহায্য করে। এটি হয়তো অনেকেরই অজানা। চায়ের উপকরণে ৯৯ শতাংশই পানি থাকায় তা শরীরে জলের ঘাটতিও পূরণ করে। অতিরিক্ত চা পান শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। বিশেষ করে যারা অনিদ্রায় ভোগেন তাদের ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, দিনে দুই কাপের বেশি চা পান আয়ু বাড়ানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা এক কাপ চা পান করেন, তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন দুই বা তার বেশি কাপ চা পান করেন, তাদের মৃত্যুঝুঁকি ৯ থেকে ১৩ শতাংশ কম ছিল। অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের গবেষকরা ইউকে বায়োব্যাঙ্কের তথ্য ব্যবহার করে এ গবেষণা কাজ শুরু করেন। ৪০ থেকে ৬৯ বছর বয়সি ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪৩ জন পুরুষ ও নারী এ গবেষণায় অংশ নেন। ১১ বছর ২ মাস ধরে তাদের পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকরা। তাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ রিপোর্ট করেন যে তারা নিয়মিত চা পান করেন। অন্যদিকে তাদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ বলেন, তারা কালো চা পান করেন। আর ১৯ শতাংশ রিপোর্ট করেন তারা প্রতিদিন ৬ কাপের বেশি চা পান করেন। গবেষণায় দেখা যায়, যারা অতিরিক্ত চা পান করেন তাদের বেশিরভাগই ছিলেন ধূমপায়ী। এদের স্বাস্থ্য অনেদের চেয়ে বেশি খারাপ ছিল। গবেষণা কাজ চলাকালীন ফলোআপের সময়ই ২৯ হাজার ৭৮৩ জন মারা যান। গবেষকরা দেখেন, প্রতিদিন তিন কাপ চা খাওয়ার ফলে সর্বজনীন মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১২ শতাংশ কমে গেছে।

তবে যারা দিনে তিন কাপের বেশি চা পান করেছেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি তেমন কম ছিল না। অন্যদিকে যারা এক থেকে তিন কাপের মধ্যে দিনে চা পান করেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমেছে। আরও দেখা যায়, যারা দুধ বা চিনি যোগ করা কালো চা পান করেছেন তাদের ওপর সামান্য প্রভাব ফেললেও মৃত্যুঝুঁকিকে প্রভাবিত করেনি। যারা প্রতিদিন দুই কাপের বেশি চা পান করেন তাদের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ ও স্ট্রোক থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি কম ছিল।

যে কারণে কালো চা : চায়ে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল থাকে, যা অনেক উদ্ভিদজাত পণ্যে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সবুজ চায়ে কালো চায়ের চেয়ে বেশি পলিফেনল থাকে। গবেষণা পরামর্শ দেয়, পলিফেনল সমৃদ্ধ একটি খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ, কিছু ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসসহ অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ক্যান্সার এপিডেমিওলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণার লেখক ডা. মাকি ইনো চোই জানান, চায়ে পলিফেনলের মতো বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ থাকে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে পারে। এ ছাড়া কালো চায়ে থেফ্লাভিন ও থেরুবিগিন নামক পলিফেনল থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, থেফ্লাভিন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি ক্যানসার ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, যা রক্তের লিপিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় আরও জানানো হয়েছে, খাদ্যে পলিফেনল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে তা গ্রহণ করলে শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। চীনের তিয়ানজিন মেডিকেল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় জানা যায়, কফি বা চা পান স্ট্রোক ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়। গবেষকরা জানান, যারা দিনে ২ থেকে ৩ কাপ বা ৩ থেকে ৫ বা ৪ থেকে ৬ কাপ চা বা কফি পান করেন তাদের স্ট্রোক বা ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

কখন চা পান করবেন : অধিকাংশ পুষ্টিবিদরা মনে করেন, সকালের দিকে চা পান করা সবচেয়ে ভালো। কারণ, এ পানীয়তে আছে ক্যাফিন। ক্যাফিন শরীর সতেজ করে। কাজের শক্তি জোগায়। ফলে কাজ শুরুর আগে এক কাপ চা অনেকটাই কার্যকর হতে পারে। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, চায়ে কিন্তু কোনো ক্যালরি নেই। চায়ের ক্যালরি নির্ভর করে কতটুক চিনি ও দুধ মেশানো হয় তার ওপর। যদি কেউ ক্যালরি ফ্রি চা পান করতে চান তাহলে তা হবে দুধ ও চিনি ছাড়া। 

দুই বেলার খাবার খাওয়ার মাঝখানে চা পান করা ভালো, এমনটাও মনে করেন অনেক পুষ্টিবিদ। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিক, পেপটিক আলসার আছে তাদের চা পানে সতর্ক থাকতে হবে। অন্যেদিকে রাতে যাদের চা পানের অভ্যাস, তাদের ঘুমের সমস্যা ঘটাতে পারে ক্যাফিন। ফলে ঘুমের আগে চা পান থেকে বিরত থাকতে হবে।

হজমশক্তি কিন্তু বাড়াতে সক্ষম চা। তাই এ পানীয়টি দিনের কোনো ভারী খাবারের পরেও পান করা যায়, যদি না কারও শারীরিক সমস্যা বা জটিলতা না থাকে। আর চা বানানোর সময় চা-পাতা দীর্ঘ সময় চুলার আঁচে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখবেন। এতে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

× মডেল : সাজেদ × আলোকচিত্রী : সুহেল

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত