প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৫ আগস্ট, ২০২৫
ইমাম ইবনে কুদামা : হাম্বলি মাজহাবের বিখ্যাত ইমাম আবদুল্লাহ বিন আহমদ ইবনে কুদামা (রহ.) ৫৪১ হিজরিতে ফিলিস্তিনের নাবলুসের জামমাইন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৫ খণ্ড বিশিষ্ট ফিকহবিষয়ক সর্ববৃহৎ গ্রন্থ ‘আল-মুগনি’ রচনা করেছেন। ১১৪৭ সালে ফ্রান্সের রাজা সপ্তম লুই ও জার্মানির রাজা তৃতীয় কনরাডের নেতৃত্বে দ্বিতীয় ক্রুসেড শুরু হয়। তখন তার বাবা আহমদ ইবনে কুদামা পরিবার নিয়ে দামেস্কে চলে যান। সেখানেই ইবনে কুদামা পড়াশোনা করেন। শায়খ আবদুল কাদের জিলানিসহ বাগদাদে অনেক মুহাদ্দিসের কাছে তিনি হাদিস ও ফিকহ পাঠ করেন। ইবনে কুদামা ও আবদুল গনি আল-মাকদিসি সম্পর্কে খালাতো ভাই ছিলেন। তাদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছিল ছয় মাস। হাম্বলি মাজহাবে উভয়ের গুরত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ৫৮৩ সালে সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর নেতৃত্বে ফিলিস্তিন উদ্ধার অভিযান শুরু হলে ইবনে কুদামা মুসলিম সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২৭ রজব বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয় পর্যন্ত তাতে অংশ নেন। ৬২০ হিজরির ঈদুল ফিতরের দিন তিনি দামেস্ক শহরে ইন্তেকাল করেন।
ইমাম আল-মাকদিসি : ইমাম আবদুল গনি আল-মাকদিসি ফিলিস্তিনের নাবলুসের জামমাইন শহরে ৫৪১ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান বাইতুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী হওয়ায় তাকে ‘আল-মাকদিসি’ বলে সম্বোধন করা হয়। ইবনে কুদামা (রহ.)-এর ভাই শায়খ মুহাম্মদ বিন কুদামা ছিলেন তাদের পারিবারিক অভিভাবক। তাই অল্প বয়স থেকেই তার ইলমচর্চা শুরু হয়। তিনি দীর্ঘকাল যাবৎ দামেস্ক, ইস্কান্দারিয়া, বাইতুল মুকাদ্দাস, মিসর, বাগদাদ, হাররান, মসুল, ইস্পাহান, হামজানসহ অসংখ্য শহরে সফর করেছেন। শায়খ আবুল মাকারিম বিন হেলাল, সালমান বিন আলী আর-রাহবি ও আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন হামজা আল-কুরাশি, আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-সহ অনেক বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিসের কাছ থেকে তিনি হাদিস ও ফিকহ সংক্রান্ত ইলম অর্জন করেছেন। পরে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে দামেস্কে চলে যান। সেখানকার কাসইউন পর্বতে প্রথম মাদরাসা নির্মাণ করেন; যা ‘আল-মাদরাসাতুল উমারিয়্যা’ নামে পরিচিত। তার পরিবারের সদস্যরা জীবনযাপনে অত্যন্ত সৎ ও বিদ্যানুরাগী হওয়ায় স্থানটি ‘সালেহিয়্যা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। উমদাতুল আহকাম, আল-কামাল ফি আসমাইর রিজাল, আল-মিসবাহসহ হাদিসসংক্রান্ত অনেক গ্রন্থ রয়েছে তার। ৬০০ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। মিসরের কারাফা নামক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
ইমাম তাবারানি : প্রখ্যাত ইমাম ও মুহাদ্দিস সুলাইমান বিন আহমদ আত-তাবারানি (রহ.) ২৬০ হিজরিতে ফিলিস্তিনের প্রাচীন নগরী আক্কা (বর্তমানে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় একটি শহর) জন্মগ্রহণ করেন। শামের তাবরিয়া এলাকার দিকে সম্পৃক্ত করে তাকে ‘তাবারানি’ বলা হয়। বাবার অনুপ্রেরণায় তিনি শৈশব থেকেই ইলম চর্চা শুরু করেন। আমৃত্যু তা অব্যাহত রাখেন। তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ হারামাইন, ইয়েমেন, মাদায়েন, শাম, মিসর, বাগদাদ, কুফা, বসরা, ইস্পাহানসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে হাদিস বর্ণনাকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের জীবনী সংকলন করেন। এ বিষয়ে তিনি শতাধিক খণ্ডের অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। এ কাজের জন্য পৃথিবীর নানা প্রান্তে তিনি ভ্রমণ করেছেন। ৩৬০ হিজরিতে ১০০ বছর বয়সে তিনি ইস্পাহান শহরে ইন্তেকাল করেন। আল-মুজামুস সগির, আল-মুজামুল আওসাত, আল-মুজামুল কাবিরসহ অনেক বিখ্যাত গ্রন্থ রয়েছে তার।
ইমাম শাফেয়ি : ইমাম মুহাম্মদ বিন ইদরিস আশ-শাফেয়ি (রহ.) ১৫০ হিজরিতে ফিলিস্তিনের গাজা বা আসকালান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। দুই বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে মক্কায় যান এবং পবিত্র কোরআন হিফজ করেন। এরপর ১০ বছর বয়সে প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থ মুয়াত্তা মুখস্থ করেন। ২০ বছরের কম বয়সেই তিনি ফতোয়া দেওয়ার অনুমোদন লাভ করেন। মদিনায় গিয়ে ইমাম মালেক বিন আনাস (রহ.)-এর কাছে হাদিস শিক্ষা লাভ করেন। বাগদাদে তিনি ইমাম মুহাম্মদ বিন আল-হাসান আশ-শাইবানি (রহ.)-এর কাছে হানাফি ফিকহ শিক্ষা করেন। ফিকহ, উসুলে ফিকহ, হাদিস ও তাফসির বিষয়ে তার অগাধ দক্ষতা রয়েছে। তিনি প্রসিদ্ধ চারটি মাজহাবের অন্যতম শাফেয়ি মাজহাবের ইমাম। ২০৪ হিজরিতে মিসরে তার ইন্তেকাল হয়।
রজা বিন হায়াওয়া : প্রখ্যাত তাবেঈ রজা বিন হায়াওয়া (রহ.) ছিলেন ফিলিস্তিন অঞ্চলের বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও উমাইয়া খেলাফতের মন্ত্রী। তিনি বিসয়ান (বর্তমানে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি জেলা) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে বাবার সঙ্গে শাম বিজয়ী প্রখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.)-এর কাছে এলে তিনি তাকে কোরআন পড়াতে বলেন। তিনি উবাদা বিন সামেত, মুয়াজ বিন জাবাল, আবু দারদা, উম্মে দারদা (রা.)-সহ অনেক সাহাবির কাছে হাদিস ও ফিকহ শিক্ষা লাভ করেন। তাকে শাম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ আলেমদের মধ্যে গণ্য করা হতো। তিনি শুধু ইবাদতে নিমগ্ন হয়ে ক্ষান্ত হননি, জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজও করতেন। রাষ্ট্রপ্রধানদের পরামর্শ দিতেন, মানুষের ঐক্য তৈরি করতেন এবং জিহাদে অংশ নিতেন।
দ্বীন পালন, গভীর ইলম ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার গুণে তিনজন উমাইয়া খলিফার মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। তারা হলেন- ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), আবদুল মালেক বিন মারওয়ান (রহ.), সুলাইমান বিন আবদুল মালেক (রহ.)। মূলত তার পরামর্শে ওমর বিন আবদুল আজিজকে খলিফা নিযুক্ত করা হয়েছিল। তার তত্ত্বাবধানে খলিফা আবদুল মালেকের যুগে পবিত্র মসজিদুল আকসা প্রাঙ্গণে কুববাতুস সাখরা নির্মিত হয়। ১১২ হিজরিতে তার ইন্তেকাল হয়।