ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মা-বাবার স্থান বৃদ্ধাশ্রম নয়

নূরুল ইসলাম নাহিদ
মা-বাবার স্থান বৃদ্ধাশ্রম নয়

মা-বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। সুন্দর এই পৃথিবীর মুখ দেখতে পাচ্ছি মা-বাবার উছিলায়। জন্মের পর থেকেই মা-বাবা আমাদের আদর-স্নেহ, মায়া-মমতা, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন। আমাদের লালন-পালন করেছেন। বটবৃক্ষের মতো ছাঁয়া হয়ে সর্বদা আমাদের পাশে থেকেছেন। মা-বাবার কলিজার টুকরা হচ্ছে সন্তান। সন্তানের মুখ দেখলে মা-বাবার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। পৃথিবীর প্রতিটি মা-বাবা তাদের সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। সন্তানকে ঘিরে হাজার স্বপ্ন দেখেন। তাই তো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দিন-রাত পরিশ্রম করে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করেন। কোনো মা-বাবা কখনও সন্তানের অমঙ্গল চান না। সন্তানকে মানুষ করতে গিয়ে নীরবে সহ্য করেন সীমাহীন কষ্ট, যা কখনও কাউকে বুঝতে দেন না। সন্তান কখনও অসুস্থ হলে চিন্তায় মা-বাবা গোসল-খাওয়া, ঘুম সব ছেড়ে দেন। ব্যস্ত হয়ে পড়েন সন্তানের চিকিৎসার জন্য। নিজের গায়ে ছেঁড়া জামা, ছেঁড়া জুতো তবুও কোনো মাথাব্যথা নেই, সন্তানদের চাহিদা মেটাতে পারলেই সন্তুষ্ট। সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কিছু চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মা-বাবার সাধ্য অনুযায়ী দেওয়ার চেষ্টা করেন। সন্তানের চোখের অশ্রু মা-বাবা সহ্য করতে পারেন না। সন্তানের প্রতি মা-বাবার কী যে প্রগাঢ় ভালোবাসা! কী যে এক মায়ার বন্ধন। আমরা সন্তানরা তা উপলব্ধি করতে পারি না। মায়ার এ বন্ধন মা-বাবা কখনও ছিন্ন করতে চান না; কিন্তু সন্তান যখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখে, তখন আর মা-বাবাকে প্রয়োজন মনে করে না। তখন মা-বাবা হয়ে যায় পরিবারের বোঝা। নিজের স্ত্রী, সন্তান পেয়ে মা-বাবা হয়ে যায় অবহেলার পাত্র। মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকেন; কিন্তু সন্তানরা ওষুধ কিনে দেওয়ার মতো প্রয়োজন মনে করে না। কোনো গুরুত্বও দেয় না। অনেক সময় বৃদ্ধ মা-বাবাকে শারীরিক আঘাত করতেও দেখা যায়। বাড়ি থেকে বের করে রাস্তায় ফেলে যায়। নিজের সম্মান ক্ষুণ হওয়ার ভয়ে বাবার পরিচয় দেয় না এমন ঘটনাও দেখা যায়। পরিবারের অন্য সবাইকে নিয়ে উন্নত খাবার, উন্নত পোশাক পরে আনন্দে সময় কাটায়। এদিকে মা-বাবা কী খেয়েছে সে খবর নেওয়ার সময় হয় না সন্তানের। তবে এ কথা চিরন্তন সত্য যে, আমি আমার মা-বাবার সঙ্গে যেমন আচরণ করব আমার সন্তানও তেমনই করবে। সুযোগ পেলে তার থেকেও বেশি করার চেষ্টা করবে। যে মা-বাবা সন্তানের একটু ঠান্ডা-জ্বর এলেই বুকে নিয়ে সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন। ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন, সেই মা-বাবা আজ চোখের কাঁটা। সন্তানরা পরিবার ও ধন-সম্পদের মোহে অন্ধ হয়ে যায়। ভালোমন্দ বিচার করার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাই তো বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে সহ্য করতে হয় অপমান, অপদস্থ ও নানা দুর্ব্যবহার। বাধ্য করা হয় নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তিল তিল করে গড়ে তোলা ধন-সম্পদ ও বাড়ি-ঘর ছাড়তে। নিজেদের সুখের কথা ভেবে বৃদ্ধ মা-বাবাকে বাধ্য করা হয় বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে। যে বয়সে মা-বাবা সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনি নিয়ে সুখে-শান্তিতে সময় অতিবাহিত করবে, সেই বয়সে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। বঞ্চিত করা হয় সবার ভালোবাসা থেকে। বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী সন্তান মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসেন। মা-বাবা অনেক স্বপ্ন নিয়ে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করিয়েছেন; কিন্তু তাদের মধ্যে নৈতিকতা বলে কিছুই নেই। এজন্য সন্তানদের ইসলামি নৈতিক শিক্ষা দেওয়া প্রতিটি মা-বাবার দায়িত্ব।

সন্তানের উত্তম গুণ হচ্ছে মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করা। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে মা-বাবার পাশে থাকা। সবসময় খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের কোনো আচরণে অথবা কোনো কথায় মা-বাবার মনে যেন কষ্ট না পায়। মা-বাবার ঋণ আমরা কখনও শোধ করতে পারব না। মা-বাবা আমাদের জন্য রহমতস্বরূপ। তাই মা-বাবার স্থান বৃদ্ধাশ্রম নয়, আমাদের হৃদয়ে। যে ভালোবাসা দিয়ে আমাদের আগলে রেখেছেন, আমরাও মা-বাবাকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে রাখব।

লেখক : শিক্ষার্থী, খিয়ংহি সাইবার বিশ্ববিদ্যালয়

সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত