ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইলুমিনাতি হতে সাবধান

এসএম আরিফুল কাদের
ইলুমিনাতি হতে সাবধান

ইলুমিনাতি নামের সঙ্গে পরিচিত নয়, এমন পাঠক খুব কম পাওয়া যাবে। ইলুমিনাতি শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ইলুমিনেতাস’ (illuminatus) থেকে। যার অর্থ ‘আলোকিত’। অর্থাৎ, যারা কোনো বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকিত বা জ্ঞানার্জনের দাবি করে অথবা বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন। ইলুমিনাতরা এই দাবি লুসিফারকে অর্থাৎ শয়তানকে মনে করে। এটি একটি ইয়াহুদি নিয়ন্ত্রিত গুপ্ত সংগঠনের নাম। যারা লুসিফার নামক শয়তানকে পূজা করে। আবার তারা একচোখ বিশিষ্ট দেবতাকে (দাজ্জাল) ঈশ্বর হিসেবে মানে।

ইলুমিনাতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১ মে ১৭৭৬ সালে ইঙ্গলস্ট্যাড (উচ্চ বাভারিয়া)-এ। এটি প্রতিষ্ঠা করেন খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত অ্যাডাম ওয়েইশপ্ট। যিনি ছিলেন ইঙ্গলস্ট্যাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্যাথলিক গির্জা আইন’ বিভাগের প্রথম (কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন) অধ্যাপক। ইউরোপে প্রথম এই সংগঠনটি কাজ শুরু করে। তখন খুব স্বল্প সদস্য নিয়ে তাদের কাজ শুরু হয়। সেই সময় এই গ্রুপের নাম ছিল ‘The order of illuminatiÕ. তাদের ভাষ্যমতে, তাদের মূল কর্মকা- হবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি করা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরীণ কাজে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে ইউরোপের সরকার তাদের এই সংস্থাকে বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে আবার আমেরিকায় কার্যক্রম শুরু করে এবং নতুন নাম দেয় ‘ফ্রি মিশনারি’। যার মাধ্যমে নিজেদের ভিত্তি আরও শক্ত করে। যা এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে।

ইলুমিনাতির লক্ষ্য হলো আমাদেরকে (মুসলিম জাতিকে) দাজ্জালের দলে অন্তর্ভুক্ত করা। আমরা সবাই জানি, দাজ্জাল পৃথিবীতে আসবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফিতনা হবে সে। তার আগমনের পর মুসলিমসহ সবাই যেন তাকে (দাজ্জাল) সাদরে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করে সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করছে। এদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ‘ওয়ান অর্ডার ওয়ার্ল্ড’ অর্থাৎ, শুধু তাদের সিদ্ধান্তেই যেন পৃথিবী চলবে। আর তাই করতে সর্বপ্রথম প্রচলন করে ব্যাংক ব্যবসা। যার মাধ্যমে প্রচুর টাকা আয় করে তারা। অনেকের ধারণা অনুযায়ী বর্তমান পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ ওদের আয়ত্বে আছে। এভাবে উন্নতি দেখিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করে পৃথিবীকে তাদের আওতায় আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইলুমুনাতির চিহ্ন হলো একটি ত্রিভুজের ভেতরে একটি চোখ। এই সাইন ব্যবহার করার কন্সেপ্টটা আসে দাজ্জালের এক চোখ এবং মিশরের পিরামিড থেকে। আমেরিকায় একটি নোটে ত্রিভুজের ভেতর একচোখ পাওয়া য়ায়। যার কারণে এর প্রতি তত্ত্ববিশ্বাসীরা মনে করেন যে, এই এক চোখ প্রমাণ করে আমেরিকা ইলুমিনাতির (দাজ্জালের) দখলে আছে। শুধু আমেরিকায় নয়, তাদের বিচরণ পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রেই রয়েছে। এসব দেশে তারা নিজেদের মধ্যে পরিচিত হতে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি, চিহ্ন বা সঙ্কেত ব্যবহার করে। তাদের সংকেত আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং মিডিয়ায়, গান-বাজনা, নাটক সিনেমায় সেলিব্রেটিদের দিয়ে সুকৌশলে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার পাঁয়তারায় আছে। তাদের চিহ্নগুলো দেখতে গুগলে সার্চ দিলেও পাওয়া যায়।

মোটকথা, এসব কিছু মূলে রয়েছে মুসলমানদের তাদের হাতিয়ে নেওয়া, ঈমান ধ্বংস করা, দাজ্জাল ও ইয়াহুদীয় কালচার আমাদের ভেতর জিন্দা করা। তাই আমাদেরকে সজাগ হয়ে ইলুমিনাতি সভ্যতা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম হতে দূরে থেকে আমাদের ঈমানকে হেফাজত করতে হবে। আমরা হয়তো তাদের দেওয়া বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর সেবা নেওয়া বন্ধ করতে পারব না। তবে তাদের টেকনোলজিগুলো আমরা ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারি। তাছাড়া ইলুমিনাতিয়ান সেলেব্রিটিদের স্টাইল থেকে তো দূরে থাকতে পারি। গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা, ফালতু সিরিয়াল থেকে দূরে থাকতে পারি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। (তথ্যসূত্র : notalinayan.wordpress.পড়স, উইকিপিডিয়া, দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)।

লেখক : আলেম ও গবেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত