
দীর্ঘ তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে গতকাল সোমবার থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবনের দুয়ার। জীবিকার সন্ধানে আবারও কাঁকড়া, মাছ ও মধু আহরণে নামবেন জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালরা। একই সঙ্গে পর্যটকদের জন্যও উন্মুক্ত হবে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। তবে নতুন মৌসুমের শুরুতে বনজীবীদের মনে দেখা দিয়েছে পুরোনো আতঙ্ক জলদস্যুদের উৎপাত। প্রজনন মৌসুমে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতিবছরের মতো চলতি বছরের ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় কাঁকড়া, মাছ ও মৌমাছির প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে জেলেদের বনে প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আজ থেকে পুনরায় বনজীবী ও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে বনভূমি। নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকা বননির্ভর পরিবারগুলো এখন নতুন করে জীবিকার স্বপ্ন দেখছেন। জীবিকার টানে তিন মাস অপেক্ষার পর তারা আবারও পাস নিয়ে বনে প্রবেশের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর মুন্সিগঞ্জ এলাকার জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তিন মাস পাস বন্ধ থাকায় বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটিয়েছি। বাচ্চাদের স্কুলের বেতনও দিতে পারিনি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, তিন মাসের বদলে যদি এক মাস বনের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয় তাহলে আমরা একটু হলেও স্বচ্ছলভাবে বাঁচতে পারব।’ শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী এলাকার জেলে রহিম মোল্লা জানান, বিকল্প আয়ের পথ না থাকায় বন বন্ধ থাকাকালীন চরম দুর্ভোগে পড়েছিলেন তারা। তবে নতুন করে বনে প্রবেশের অনুমতি পেয়ে স্বস্তি ফিরে এলেও জলদস্যু আতঙ্ক তাদের শঙ্কিত করছে।তিনি বলেন, সম্প্রতি এ অঞ্চলে জলদস্যুদের তৎপরতা বেড়েছে। ফলে নতুন মৌসুমে বনে প্রবেশের আগে আবারও আতঙ্কে আছি। সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক বলেন, ‘জেলে-বাওয়ালি ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোস্ট গার্ড, নৌ-পুলিশ ও বন বিভাগের যৌথ টহল চলবে। তবে সবাইকে নিয়ম মেনে পাস সংগ্রহ করে বনে প্রবেশ করতে হবে। তিনি আরও জানান, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনে এরইমধ্যে ২ হাজার ৯৭০টি পাসপারমিট নবায়ন করা হয়েছে। নবায়নকৃতরা সরকারি রাজস্ব পরিশোধের মাধ্যমে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন।
বন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী কাঁকড়া আহরণের জন্য প্রতিটি বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) তে সর্বোচ্চ তিনজন, মাছ আহরণের জন্য প্রতিটি বিএলসিতে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং মধু আহরণের জন্য প্রতিটি বিএলসিতে সর্বোচ্চ সাতজন বনে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে প্রতিটি বিএলসিতে যে কয়জন বনে প্রবেশ করবে তাদের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয় পত্র বন বিভাগের নিকট জমা দিতে হবে।