
রাজবাড়ী সদরের বরাট ইউনিয়নের কাচরন্দ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আক্কাছ সরদার (৭১) ইউটিউব দেখে ছাদ বাগান করে হয়েছেন সফল। নিজের পরিবারের ফলের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ফল বাজারে বিক্রি করছেন, আত্মীয়-স্বজনদেরও উপহার দিচ্ছেন। এমনকি এখন তিনি নিজেই ফলদ গাছের চারা উৎপাদন করে আগ্রহীদের সরবরাহ করছেন। আলী আক্কাছ বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকোমাস্টার (ট্রেনচালক) হিসেবে চাকরি করতেন। ২০১১ সালে অবসর নেওয়ার পর একমাত্র ছেলে চাকরিসূত্রে বাইরে থাকায় স্ত্রীকে নিয়ে একাই বসবাস করতে থাকেন। অলস সময় কাটাতে শুরু করলে তিনি শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার জন্য ছাদ বাগানের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি বলেন, প্রথমে ছাদে লাউ গাছ লাগাই। প্রচুর লাউ ধরে। পরে ছেলে একটি মোবাইল ফোন দিলে ইউটিউবে বিভিন্ন ছাদ বাগান দেখা শুরু করি। ধীরে ধীরে আমি নিজেই চারা উৎপাদন করে ছাদে গাছ লাগাতে শুরু করি। বর্তমানে তার ছাদে প্রায় দুই হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে রয়েছে দেড় শতাধিক ফলদ গাছ ও চারা। এরমধ্যে দেশি-বিদেশি পেয়ারা, মালটা, বাদামী লেবু, আঙুর, বরই, লিচু, আনার, উন্নত জাতের এলাচসহ নানা ফলের গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে কলমের মাধ্যমে নতুন চারা তৈরি করছেন তিনি।
আলী আক্কাছ বলেন, চারা কিনে অনেকবার ঠকেছি। তাই এখন নিজেই কলম তৈরি করে চারা উৎপাদন করি। কেউ চাইলে আমি সরবরাহ করতে পারি। আমার ছাদ বাগানে রাসায়নিক সার খুব কম ব্যবহার করি। নিজেই জৈব সার তৈরি করি। এতে একদিকে বিশমুক্ত ফল পাওয়া যায়, অন্যদিকে ছাদের গাছের কারণে ঘরের ভেতরও ঠান্ডা থাকে। সরেজমিন দেখা যায়, বাড়ির ছাদে প্লাস্টিকের ট্রেতে কলমের চারা, সারিবদ্ধ ফলগাছ, ব্যাগিং করা পেয়ারা, বরই, আম, আনারস, শসা, শিম, পুঁইশাকসহ নানা শাকসবজিতে ভরপুর। ছাদ বাগানের প্রবেশপথে টাঙানো রয়েছে ব্যানার ‘সৌখিন ছাদ বাগান ও মিনি নার্সারি’। এরপরই ছাদে ওঠার সিড়ি। ছাদে উঠতেই চোখে পরে প্লাস্টিকের ট্রেতে রাখা বিভিন্ন ধরনের ফলের কলমের চারা। ছাদ জুড়ে মালটা, পেয়ারা, বাদামী লেবু, আঙুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। পেয়ারা গাছে প্রচুর পরিমাণে পেয়ারা ঝুলছে। পেয়ারাগুলো পলিথিন দিয়ে ব্যাগিং করে রাখা হয়েছে। দুই একটি গাছে পেয়ারা পেঁকে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। পেয়ারার পাশ দিয়েই লাগানো রয়েছে বরই গাছ। এসব গাছের নিচে রোপণ করা হয়েছে হলুদ। এছাড়া বাগানটিতে আম, আনারস, লেবু, শসা, শিম, পুঁইশাক রয়েছে। প্রতিটি ফলগাছেই চারা উৎপদানের জন্য কলম তৈরি করা হয়েছে। গাছগুলো রোপণের জন্য রড দিয়ে বানানো খাঁচার উপর প্লাস্টিকের ড্রাম ব্যবহার করা হয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, ছাদ বাগান পরিবেশ দূষণ কমায়, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। আলী আক্কাছ সরদারের ছাদ বাগান অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ছাদ বাগানে আগ্রহীদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।