ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কোরআনের আলোকে জীবন বন্ধু নির্বাচন ও কর্মের প্রভাব

দিয়া উদ্দীন রাকিব
কোরআনের আলোকে জীবন বন্ধু নির্বাচন ও কর্মের প্রভাব

আসল বন্ধু কারা যারা তোমার পক্ষে নাকি ন্যায়সঙ্গত! আসলে কি তুমিও কি সত্যির পথে হাঁটছো নাকি মিথ্যার পক্ষ নিচ্ছ? আল্লাহ পাক তো আমাদের কোরআনের আয়াতে বলেছেন-

‘তাদের ওপর তাদের রবের পক্ষ থেকে রহমত ও শান্তি বর্ষিত হয়; আর তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত।’ আসলে তুমি কার সঙ্গে খেলছ বা কথা বলছ। সে কী আল্লাহর ইবাদত করে। নাকি যাকে তাকে গালমন্দ করে? যারা অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে, তাদের জন্য আল্লাহতাআলা কঠিন শাস্তির ঘোষণা করেছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনের বেশ কয়েকটি আয়াতে কঠোর বাণী রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কোনো একটি আয়াতে সরাসরি ‘যারা অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে’ এমন শব্দবন্ধ ব্যবহার না থাকলেও, এ ধরনের গর্হিত কাজকে আল্লাহতাআলা অপছন্দ করেন এবং এর জন্য শাস্তি নির্ধারণ করেছেন। সূরা আল-হুজরাতের ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের উপহাস না করে; হতে পারে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম। আর নারীরা যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে; হতে পারে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম। এবং তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম।’ এই আয়াতে সরাসরি অশ্লীল গালাগালের কথা উল্লেখ না থাকলেও, ‘মন্দ নামে ডেকো না’ এবং ‘একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না’- এর মাধ্যমে আল্লাহতাআলা এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন যা অন্যের সম্মানহানি করে এবং সমাজে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। অশ্লীল গালাগাল নিঃসন্দেহে এই ধরনের গর্হিত কাজের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, অন্যান্য আয়াতে এবং হাদিসেও অশ্লীল ভাষা ব্যবহারকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আল্লাহতাআলা অশ্লীল ও খারাপ কথা অপছন্দ করেন এবং যারা এমন কাজ করে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে চলে যায়। আসল বন্ধু কারা বন্ধু বলতে আপন বলতে কেউ হয় না বরং যারাই হয় তাদের থেকে তুমি প্রতারিত হবে। এই মহা পৃথিবীতে আপন বলতে এক আল্লাহ আর বাবা-মা, ভাই-বোন ছাড়া আর কেউ নেই। তাহলে প্রশ্ন তো এখানেই রইল। আসল বন্ধু তারাই যারা তোমার কল্যাণ চাইবে ও যারা সেই নিকৃষ্ট জালিম নয়। আসল বন্ধু কীভাবে চিনবে? সবচেয়ে আগে তোমার ধর্ম। আসলে তোমার ধর্ম কী তোমায় খারাপ কিছু শিক্ষা দিবে, মোটেও না বরং তোমার ধর্ম তোমায় ন্যায় শিক্ষা দান করবে। খারাপ হতে দূরে চলতে সাহায্য করবে। যদি তোমার বন্ধু সে ন্যায়ের পক্ষে থাকে তাহলে বুঝবে সেই তোমার আসল বন্ধু। সে কল্যাণে আসবে। আল্লাহর পথ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে তোমায় খারাপ কাজ হতে হেফাজত করবে। ‘মুমিনরা তো একে অপরের ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’

একটি মানুষের নিয়তি যে মানুষটিকে ভালো-মন্দ পথ যাচাই-বাছাইয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তবে যদি নিয়তিতেই ভেজাল থাকে তাহলে ব্যক্তিই নিয়ত করে তা সেই ব্যক্তির উপর প্রতিফলিত হয়। সমাজ দেশ জাতি তথা সমগ্র বিশ্বে থাকা মানবজাতির নিয়তির মধ্যে কোনো না কোনো ভেজাল থাকে। যার ফলে যেই সমাজ কিংবা জাতির উপরে তার প্রতিফলন ঘটে। যদি সমাজ সঠিকভাবে না চলে তাহলে দেশ কীভাবে চলবে? আবু হুরাইরা বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে তাহলো-

‘আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক অবয়ব এবং ধন-সম্পদের দিকে তাকান না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর এবং বাস্তব কাজের দিকে তাকান।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৭০৭, ৬৭০৮; মুসনাদু আহমাদ, হাদিস নং ৭৮২৭; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৩৯৪; সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪১৪৩; শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ১০৪৭৭, ১১১৫১) এই হাদিসটি থেকে শিক্ষা হলো একটি মানবজাতির কতখানি অর্থ আছে কিংবা কতখানি ধন-সম্পদশালী তা মহান স্রষ্টা দেখবেন না বরং তিনি সেই জাতির অন্তর ও বাস্তবিক কাজই দেখবেন। তাহলে এর খারাপ বা মন্দ অভ্যাস একজন মানুষ কীভাবে ভালো/ছাড়বেন? তাই তো ভাবছেন!

দেখুন ! মন, দেহ, জ্ঞান একজন মানুষকে পরিবর্তন করতে পারে। কাজেই সবার মন মানসিকতাকে পরিবর্তনের খুব প্রয়োজন তাই আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত আর আখিরাত নিয়েই। আমাদের নিজেদের পরিবর্তনের প্রয়োজন। একই কাজের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি ভালো ফল পাবে? অথবা একই কাজ করে একজন মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাবে! একজন সঠিক নিয়তের কারণে সুফল পাবে। আর অপরজন অশুদ্ধ নিয়তের কারণে সুফল থেকে বঞ্চিত হবে ইত্যাদি। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলে দাও, প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বভাব বা নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে।’ (সূরা আল ইসরা, আয়াত : ৮৪)

আর তাই কুরআনে আল্লাহ বলেন , ‘যে আখিরাতের কৃষিক্ষেত্র চায় আমি তার কৃষিক্ষেত্র বাড়িয়ে দেই। আর যে দুনিয়ার কৃষিক্ষেত্র চায় তাকে দুনিয়ার অংশ থেকেই দিয়ে দেই। আর আখিরাতে তার কোনো অংশ নেই।’ (সূরা আশ শূরা, আয়াত : ২০)

কাজেই প্রতিটি মানুষের কাজের জন্য যেমন নিয়তের দরকার হয় ঠিক একইভাবে মনের শুদ্ধতার ও প্রয়োজন হয়, আর যদি এই শুদ্ধতাই না থাকে বা নিয়তেই ভেজাল থাকে তা হলে যে ব্যক্তিই নিয়ত করেছে তা সেই লোকের উপর প্রতিফলিত হয় বা হবে। আর এভাবেই নিয়ত আমাদের ভালো ও মন্দ পথ দেখাতে সাহায্য করে।

লেখক : ছাত্র : মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত