ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঢাকায় টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে

ড. অজয় কান্তি মন্ডল
ঢাকায় টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে

দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে মাঝেমধ্যে কারওয়ান বাজারকে বেছে নেই এবং সবজি, মাছ মাংসের প্রয়োজন কারওয়ান বাজারেই মেটানোর চেষ্টা করি। বাসার পাশেই হাতিরপুল কাঁচা বাজার অবস্থিত। কিন্তু হাতিরপুল কাঁচা বাজারের সবজি, মাছ কিংবা মাংসের দাম হাতির মতোই (মাত্রারিক্ত বেশি)। জায়গার নামের সঙ্গে জিনিসের ও তো একটা মিল থাকতে হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে, হাতিরপুল কাঁচা বাজারে সবজির দাম কারওয়ান বাজারের দ্বিগুণ। মাছ-গোশতের দামও প্রায় দেড়গুণ হবে। এই বিষয় নিয়ে পরবর্তী কোন লেখায় বিস্তারিত তুলে ধরব। যাইহোক মাঝেমধ্যে প্রাতঃভ্রমণের কাজটা কারওয়ান বাজারে যাওয়া আসার পথে সেরে ফেলি। যেহেতু পাইকারি বাজার তাই যত ভোরে যাওয়া যায়, ততই উত্তম। সবকিছু ফ্রেশ পাওয়া যায়। গেল সপ্তাহের একদিন ভোর ৫টায় রওনা দিলাম। হাতিরপুল মোড় হয়ে ইস্টার্ন প্লাজা শপিং কমপ্লেক্স ধরে বীর উত্তম সি. আর. দত্ত রোড হয়ে সোজা কারওয়ান বাজার যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করলাম। বলে রাখা ভালো, সি. আর. দত্ত রোডের ডানপাশে পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নামক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্টেশন এবং একটি পাবলিক টয়লেট অবস্থিত। রাস্তার ডানপাশ ধরে যেতে যেতে ঐদিন সকালে লক্ষ্য করলাম পাবলিক টয়লেটটির সামনে মহিলাসহ কয়েকজন পথচারীর ভিড়। কাছাকাছি পৌঁছালে বুঝতে পারলাম ওনারা দূরপাল্লার পরিবহন থেকে মাত্র নেমে পাবলিক টয়লেটে এসেছে। তাদের কাছের ব্যাগ, লাগেজ দেখে এরকমই জানান দিচ্ছিল। সারারাতের ভ্রমণ, সকালে টয়লেটে যেতে হতে পারে, এটা স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ঐ পাবলিক টয়লেট বন্ধ। আশপাশের মানুষজন বলছে কিছুদিন ধরেই নাকি এটা বন্ধ আছে। বন্ধের কারণ কেউ জানে না। এজন্য পথচারী বেচারারা একটু বিপদেই পড়ছে বলা যায়। রাস্তার পাশের এই ধরনের চাকচিক্য পাবলিক টয়লেটগুলো প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই বেছে নেই। কিন্তু কিছুদিন ধরে যে কেন বন্ধ যাচ্ছে সেটা কারও জানা নেই এবং বেচারা পথচারীরাও এই হুটহাট বন্ধের কারণে বেশ বিপাকে পড়েছে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। এই ধরনের পাবলিক টয়লেট নিয়ে পরে বিস্তারিত বলছি।

এখন আসি ঢাকা শহরের সঠিক জনসংখ্যার পরিসংখ্যান নিয়ে। যদিও ঢাকা শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। ২০২২ সালের প্রকাশিত জনশুমারি প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরে ১ কোটি ২ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে। কিন্তু এই ‘বেশি’ টা যে কত বেশি সেটার সঠিক পরিসংখ্যান এখনও অজানা। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকায় ভাসমান মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এই ৫০ হাজার মানুষ সরাসরি ফুটপাতে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করে। বিভিন্ন উদ্যান, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব ভাসমান মানুষ তাদের দিনাতিপাত করে। ভাসমান এই বিপুলসংখ্যক জনগণের জন্য কোন বাসস্থান, সুষ্ঠু স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা নেই, ফলে শহর দূষিত হচ্ছে। আবার ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ঢাকা শহরে ১১ লাখ রিকশা চলাচল করছে। এই সংখ্যা বিগত ৫ বছরে যে অনেক বেড়েছে সেটা নিশ্চিত। বর্তমানে ধারণা করা হয়, দুই সিটি কর্পোরেশেন মিলিয়ে প্রায় ১৩ লাখ রিকশা চলাচল করছে। অর্থাৎ এখানে কম করে হলেও ১৩ লাখ ব্যক্তির জন্য সুষ্ঠু স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা ঢাকা শহরে নেই। রিকশা চালকরা দিনের অধিকাংশ সময় রাস্তায় থাকে। আর একারণে তাদের প্রস্রাব, পায়খানার কাজ বাইরেই সারতে হবে স্বাভাবিক। ঢাকা শহরকে যদি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পরিপটি দেখতে চাই তাহলে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সুষ্ঠু স্যানিটেশন ছাড়া আদৌ সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তব হলেও সত্য, ভাসমান মানুষের সঙ্গে রিকশাওয়ালা এবং পথচারী মিলিয়ে ঢাকা শহরে বিদ্যমান যে পাবলিক টয়লেট আছে, সেটা নিতান্তই নগণ্য। হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় চাকচিক্য কিছু পাবলিক টয়লেট চোখে পড়ে। বিশেষ করে জনাকীর্ণ কিছু কিছু এলাকায় মাঝেমধ্যে এসব টয়লেট অবস্থিত।

শহরে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার তুলনায় এই সংখ্যাটি অতি নগণ্য। তবে মন্দের ভালো, এসব পাবলিক টয়লেটের কিছু কিছু বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি বলা যায়। অর্থাৎ একজন রুচিশীল মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এসব পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু এসব পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে গেলে সর্বনিম্ন ১০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। সর্বনিম্ন বললাম এই কারণে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই টাকা দ্বিগুণ বা তিনগুণ। সচারাচার টয়লেটে প্রবেশদ্বারে চেয়ার-টেবিল নিয়ে একজন ব্যক্তি টয়লেট ব্যবহারকারীদের নিকট হতে টাকা নিতে দেখা যায়। দেশের প্রেক্ষাপটে এই উচ্চ মূল্য দিয়ে পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সামর্থ্য মুষ্টিমেয় ঢাকাবাসীর থাকলেও অন্ততপক্ষে রিকশাওয়ালা তথা ভাসমান জনগোষ্ঠীর নেই। এক্ষেত্রে বলতেই হয়, এসব পাবলিক টয়লেট শহরে বসবাসকারী গৃহহীন এবং ভাসমান মানুষের একটা বড় অংশের অনুকূলে না। অনুকূলে না নিম্ন আয়ের মানুষের। ফলে তারা যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে। বিশেষ করে ভোরের আলো ফোটার আগেই খোলা জায়গায় তারা মলমূত্র ত্যাগের কাজ সেরে ফেলে। আবার কেউ কেউ জনসমক্ষে এই কাজটি করে থাকে। এজন্য বেশিরভাগ ওভারব্রিজের গোড়ায় নোংরা হচ্ছে। একটু আড়াল হওয়ায় এসব জায়গায় ভাসমান মানুষরা বেছে নেয়। ফলে ওভারব্রিজগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। মানুষ ওভারব্রিজে না উঠে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সেইসাথে নগর দূষিত হচ্ছে।

তাই ঢাকা শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার যতই পরিকল্পনা বা ছক করা হোক না কেন, ভাসমান মানুষসহ পথচারীর সুষ্ঠু স্যানিটেশন ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত এটা দূরহ। যদি উক্ত পাবলিক টয়লেট নিম্ন আয় তথা দিনমজুর মানুষের অনুকূলে না হয় তাহলে এগুলোকে পাবলিক টয়লেট বলার পক্ষে বিপক্ষে অনেক তর্ক-বিতর্ক হবে। তবে এই সম্পর্কে একটা কথা না বললেই নয়। কথায় আছে, কারও বাসায় যাওয়ার পর, তার রান্নাঘর এবং বাথরুম দেখলে সহজেই সেই বাসার মানুষের রুচি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পরিপটি সম্পর্কে সহজেই অনুমান করা যায়। অর্থাৎ বাথরুম কিংবা রান্নাঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানুষের সার্বিক রুচি সম্পর্কে সহজে ধারণা দেয়। সেই হিসেবে একটা সমগ্র দেশ তথা রাজধানীর স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্পর্কেও সেই দেশ সম্পর্কে সকলকে রুচির ধারণা দেবে। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের কাছে। সহজ কথায় রাস্তা ঘাটের সঙ্গে পরিপটি স্যানিটেশন ব্যবস্থা যেকোনো শহরের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। যেটা আমাদের দেশে বহু অভাব রয়েছে। এ সম্পর্কে চীনে প্রবাস জীবনের সামান্য অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই। চীনের শহর কিংবা গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ২/৩ কিলোমিটার দূরত্ব পর পর সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য আধুনিক পাবলিক টয়লেট সবার নজর কাড়ে।

কিছুদূর পর পর সাইনবোর্ডে নির্দেশনা দেওয়া থাকে, সেখান থেকে পাবলিক টয়লেট কত দূরে এবং কোনদিকে। সমস্ত পাবলিক প্লেস যেমন সব মেট্রো স্টেশনের কাছে, শহরের জনাকীর্ণ অবস্থানে এসব পাবলিক টয়লেটগুলো অবস্থিত। এছাড়া পার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, বিপণি বিতান ও সুপার মলের পাবলিক টয়লেটগুলো সত্যিই প্রশংসানীয়। প্রতিটি টয়লেটে পুরুষ, মহিলা, প্রতিবন্ধী এবং শিশুদের ব্যবহারের জন্য একের অধিক আলাদা আলাদা স্থান রয়েছে। টয়লেটের সঙ্গে বেসিনে সার্বক্ষণিক পানির ব্যবস্থা, হ্যান্ড ওয়াশ, অটোমেটিক হ্যান্ড ড্রায়ার এবং টিস্যুর ব্যবস্থাও করা আছে। আবার কোথাও কোথাও সুপেয় খাবার পানির ব্যবস্থা আছে। টিস্যু নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী একটা স্ক্রিনের সামনে দাঁড়ানোর পরে তার ফেস ডিটেক্ট করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ (প্রায় ৩/৪ হাত লম্বা) টিস্যু বের হয়ে আসে। যেকেউ এই সুবিধা নিতে পারে। তবে ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ একবার এই টিস্যু নেওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু সব টয়লেটে এই টিস্যু বা বেসিনের ব্যবস্থা নেই। তুলনামূলক একটু জনাকীর্ণ এলাকায় এবং বেশিরভাগ বিনোদন কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থিত টয়লেটে এই ধরনের সার্বিক সুবিধাদি থাকে। টয়লেটের ভেতরে সর্বদা রেকর্ডিং বাজতে থাকে। সেখানে টয়লেট ব্যবহার করার পরে আরেকজন যেন ব্যবহার করতে পারে, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তবে মজার বিষয় হলো, এসব টয়লেটের অধিকাংশই বেসিন, কমোডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্ল্যাশ হয়ে পানি বের হয়। একজন ব্যবহার করার পরপরই এই ফ্ল্যাশ স্বয়ংক্রিয় কাজ করে। ফলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে তেমন ঝুক্কি-ঝামেলায় পড়া লাগে না। তারপরেও প্রতিটি টয়লেট তদারকি করার জন্য কমপক্ষে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ২৪ ঘণ্টা নিয়োগ আছে। কমপক্ষে বললাম এই কারণে, বড়সড় টয়লেটগুলোতে একের অধিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োজিত থাকে। এসব পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রতি ১০-১৫ মিনিট পরপর ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, পরিষ্কারক দিয়ে এত ভালোভালো টয়লেটের ফ্লোর, ব্যাসিন, কমোড থেকে শুরু করে সমস্ত স্থান পরিষ্কার করে দেয়, যেটা আমাদের দেশের অনেক নামকরা আবাসিক হোটেলের টয়লেটকে ও হার মানায়।

টয়লেটগুলোর সঙ্গে এসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ঘুমানো, বিশ্রাম নেওয়া বা রান্না করার জন্য ছোট জায়গা করা আছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের যেহেতু ২৪ ঘণ্টাই ডিউটি সেহেতু কর্তৃপক্ষ এই বিষয়গুলো ভেবেই তাদের সার্বিক সুবিধার কথা চিন্তা করে কর্মক্ষেত্রের সঙ্গেই এসব ব্যবস্থা করে রেখেছে। এখন একটা মজার তথ্য দিই। চীনের এসব টয়লেট কিন্তু বিনা পয়সায় ব্যবহার করা যায়। বিনা পয়সায় হ্যান্ড ওয়াশ, হ্যান্ড ড্রায়ার, টিস্যু পেপার, সুপেয় পানীয় জল ব্যবহার করা যায়। চীনে যারা এরই মধ্যে ভ্রমণ করেছেন বা ভবিষ্যতে করবেন তারা আমার কথাগুলোর সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন। একটি দেশের পাবলিক টয়লেট এমন হতে হবে, যেগুলো হবে সেদেশের সকল পাবলিকের ব্যবহার উপযোগী। সেটা হতে পারে একজন রিকশাওয়ালা, ভাসমান মানুষ, দিনমজুর থেকে কোটিপতি যেকোনো ব্যক্তি। কিন্তু তেমনটি এখানে লক্ষ্য করা যায় না। অনেকেই বলে থাকে, টাকা নেওয়ার কারণে পাবলিক টয়লেটগুলো ব্যবহারের উপযোগী থাকে। ফ্রি হলে সেগুলো কেউ ব্যবহার করতে পারত না। কথাটির সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত নই। ফ্রি করে তার রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব না নিলে তো ১ দিন পরেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। পাবলিক টয়লেট ফ্রি করে দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, সেটা আর পরিষ্কার করা হবে না।

রাজধানীর সোহরায়ার্দী উদ্যানের পাবলিক টয়লেটগুলোর অবস্থা ঠিক এরকম। পার্কের টয়লেটগুলোর ভেতরে এমন ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে যে, দিনের বেলায় এর ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে ভয় পায়। তার উপর এসব টয়লেটে লাইট নষ্ট, পানির লাইন নষ্ট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কেউ নেই। অধিকাংশ সময়ে এসব পাবলিক টয়লেট নেশাখোরদের আড্ডাখানা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় সাধারণ জনগণ এগুলোতে প্রবেশের সাহস পায় না। পানি না থাকায় অতিমাত্রায় দুর্গন্ধে টয়লেটগুলোতে প্রবেশ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এসব পাবলিক টয়লেট অর্থ ব্যয় করে বানানো হয়েছে ঠিকই; কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো ব্যবহার উপযোগী রাখার ব্যাপারে কেউ পদক্ষেপ নেইনি। ফলে এসব পাবলিক টয়লেট মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে অর্থের অপচয় ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু যদি এগুলো নির্মাণ পরবর্তী উপযুক্ত তদারকির মাধ্যমে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হত, তাহলে এসব পাবলিক টয়লেটগুলোর নির্মাণ সার্থক হত। নির্মাণ পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেশে এধরনের অনেক প্রকল্প সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি। তাই সুচিন্তিত এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ পূর্বক দেশের এ ধরনের প্রকল্প যাতে সাফল্যের মুখ দেখতে পায়, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। আবার বিপরীতক্রমে রমনা পার্কের পাবলিক টয়লেটগুলো অবস্থা খুবই ভালো। চীনের পাবলিক টয়লেটগুলোর যেমন বর্ণনা দিলাম ঠিক তেমনই। এগুলোও কিন্তু জনগণ বিনা পয়সায় ব্যবহার করতে পারে। তার মানে, এখানে যথাযথ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলা যায়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক টয়লেট না থাকার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বেশিরভাগ নারী, শিশু এবং সর্বোপরি ঢাকাবাসীর। ঢাকায় বসবাসকারী নারীদের প্রায় ৮৫ ভাগই বিভিন্ন কারণে নিয়মিত বাইরে যায়। পথিমধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেটের অভাব মাথায় রেখে তারা পানি কম পান করে। ফলে এসব নারীদের অধিকাংশই নানা রকম স্থায়ী ও অস্থায়ী রোগে ভুগছে।

এছাড়াও তাদের অধিকাংশই বেশি সময় ধরে প্রস্রাব, পায়খানা আটকে রেখে কিডনিজনিত রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নারী ও প্রতিবন্ধীদের শৌচাগার ব্যবহারে মানসম্মত ব্যবস্থা ও যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় তাদের ভেতরে বিভিন্ন জটিল রোগ দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে নীতি নির্ধারকদের যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ পরবর্তী সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি পাবলিক টয়লেটে সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োজিত থাকবে। স্বল্প বেতনে এসকল কর্মী নিয়োগ করা যেতে পারে। এসব কর্মী প্রতিটি ব্যক্তি টয়লেট ব্যবহারের পর পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করবে যেন পরবর্তী ব্যক্তি অনায়াসেই সেই টয়লেট পুনরায় ব্যবহার করতে পারে।

সকল পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে কোন প্রবেশ মূল্য থাকবে না। বিশ্বে যখন প্রযুক্তির বিপ্লব চলছে ঠিক সেই সময়ে আমাদের এই নাজুক অবস্থা সত্যিই বেমানান। শহরের স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে ঢাকাকে তার সৌন্দর্য ধরে রাখার সুযোগ করে দিতে হবে। একথা বলতেই হয় ঢাকা শহরকে টেকাতে হলে একটি বহুমুখী প্রয়াস প্রয়োজন, যার মূলে থাকবে কার্যকর শাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং সুচিন্তিত নগর পরিকল্পনা।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত