ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইরানে ইসরায়েলের হামলা

চরম নিন্দনীয় ঘটনা
ইরানে ইসরায়েলের হামলা

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে ইসরায়েল। বিশ্ব মানবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফিলিস্তিনে নিধনযজ্ঞ চালিয়েই দখলদার জাতিটি ক্ষান্ত হচ্ছে না, ইরানের বিরুদ্ধেও বাজাচ্ছে যুদ্ধের দামামা। গত শুক্রবার ভোরে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো ইসরাইলের সামরিক হামলায় অন্তত ৬ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। পরে নিজেদের প্রতি হুমকি দূর করার খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে ইসরায়েল জানায়, অপারেশন ‘রাইজিং লায়ন’ নামে রাতভর চালানো এ হামলায় ইরানের তিন জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডারও নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের ২০০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ইরানজুড়ে শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এদিকে ইরানের তাসনিম সংবাদ সংস্থা হতাহতের বিষয়ে জানিয়েছে, ইসরাইলের বর্বরোচিত এ হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩৫ নারী ও শিশুও রয়েছে। আমরা এ ঘটনার চরম নিন্দা জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, ইরাক-ইরান যুদ্ধের পর তেহরানে এমন ভয়াবহ হামলা আর হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এর আগে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে পালটাপালটি হামলা দেখা গেলেও ইরানের মাটিতে এমন সরাসরি সামরিক অভিযান ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর এবারই প্রথম। আবার ইরানে ইসরায়েলের এ হামলার সময়টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ ঘটনার মাত্র দুই দিন বাদেই ওমানের মাস্কটে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করছিল ওমান। এ ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিল দেশটি। তবে গত শুক্রবার হঠাৎই ইরানজুড়ে ইসরাইলের ভয়াবহ সামরিক হামলার পর সেই আলোচনা যে ভেস্তে গেল, তা বলাই বাহুল্য। ইরান এরই মধ্যে আলোচনা বাতিলের কথা জানিয়েও দিয়েছে। এদিকে ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওমান একে অগ্রহণযোগ্য, বিপজ্জনক এবং উত্তেজনা সৃষ্টির বেপরোয়া চেষ্টা বলেই ক্ষান্ত হয়নি, পাশাপাশি এমন কর্মকাণ্ড যে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, তাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলের আগ্রাসি আচরণের প্রভাব যে শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই পড়েছে, তা নয়। আমরা দেখছি, এ হামলার পরপরই তেলের বাজারে তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জানা যায়, এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ৯ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার লাগাম যদি এখনই টানা না যায়, তবে বিশ্ব যে আরেকটি অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে, তা অনুমান করা কঠিন নয়। ইসরায়েলের মিত্র হিসাবে পরিচিত পশ্চিমা শক্তিকে তাই বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতি এড়াতে এখন থেকেই তৎপর হতে হবে। ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনা নিরসনে তো বটেই, ফিলিস্তিন ইস্যুতেও পশ্চিমা শক্তিকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। স্বীকার করতেই হবে, ফিলিস্তিনের মাটিতে যুদ্ধের নামে ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যে বর্বরতা চালাচ্ছে, এমন নৃশংসতা আগে কখনও দেখা যায়নি। ফিলিস্তিনের ওপর নেতানিয়াহু বাহিনীর এ হামলাকে খোদ ইসরায়েলিরাও ভালো চোখে দেখছে না। মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন প্রতিনিয়ত গাজায় ইহুদি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। প্রায় হাতছাড়া হওয়া ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে গিয়ে যে মরণখেলায় মেতেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী, তা এ অঞ্চলের ভাগ্যকে কোথায় নিয়ে ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। মানবতার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে বিশ্বনেতারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত