ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

রায়হান আহমেদ তপাদার
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার দেশ হলেও গত কয়েক দশকে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবহাওয়া ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। ছয় ঋতুর চরিত্র এখন একটাই গরম। দেশের মোট আয়তনের চার ভাগের এক ভাগ বনভূমি থাকার কথা।

কাগজে-কলমে, বই-পুস্তকের লেখায় ১২ ভাগ, প্রকৃত অর্থে আছে সাত থেকে আট ভাগ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদাপন্ন দেশের তালিকায় অন্যতম বাংলাদেশ। এক সময় বাংলাদেশে ছিল বাঁশ-বেত-ছন-মাটির তৈরি ঘরবাড়ি। বন-জঙ্গল ছিল প্রচুর। প্রকৃতিতে ছিল মনোমুগ্ধকর হিমেল বাতাস। এখন কড়া রোদের তেজ। দিনভর তির্যক সূর্যের দহন। প্রচণ্ড খরতাপে পুড়ছে সারা দেশ। রাতে ও দিনে দাবদাহে শরীর ঝলসানো ও ঘাম ঝরানো গরম।

গ্রাম-শহরে একই অবস্থা। রাস্তাঘাট, গাছতলায় কোথাও একটু ঠান্ডা বাতাস নেই। লোহা পোড়ানোর মতো গরমে নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর, পুকুর সব শুকিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সের তথ্যতে বলা হয়, জলবায়ুর পরিবর্তনের বিচারে শীর্ষ দশ ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথম অবস্থানে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ও উদ্বেগজনক সমস্যা। বৈশ্বিক প্রভাব যেমন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সমানভাবে স্পর্শ করছে, তেমনই বাংলাদেশের মতো দেশের ওপর এর প্রভাব আরও ভয়াবহ। ভৌগোলিক অবস্থান, জনঘনত্ব এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা এ দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয় দাঁড়িয়েছে।

বিশেষত, কৃষি খাত এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনাদিকালের ভবিষ্যৎ। হুমকির মুখে পড়ছে দেশের জীববৈচিত্র্য। ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে। যার ফলে প্রাণহানি, ভূমি, ঘরবাড়ি, জীবিকার ক্ষতি ছাড়াও ব্যক্তি এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী স্থানচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছে। আজ থেকে এক যুগ আগেও মনে করা হতো, বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। অর্থাৎ, তীব্র গরমের উষ্ণতম দিনের সংখ্যা এপ্রিল মাসেই বেশি থাকে। কিন্তু আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে বছরের উষ্ণতম দিনের সংখ্যা এখন শুধু এপ্রিল মাস তথা গ্রীষ্মকালে সীমাবদ্ধ নেই; বর্ষাকালেও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের মতে, গ্রীষ্মকালের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বর্ষাকালেও তাপপ্রবাহ চলা, এই সবকিছু ঘটছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। ওয়ার্ল্ড ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুকিতে আছে, তার মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ দশে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা আগের তিন দশকের চেয়ে তীব্রভাবে বাড়ছে। অর্থাৎ, ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে এটি ক্রমশ বাড়ছেই। এমনকি গত ত্রিশ বছর ধরে শীতকাল ও বর্ষাকালেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম পড়ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগে বাংলাদেশে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত তাপপ্রবাহ দেখা যেত।

কিন্তু গতবছর সেই তাপপ্রবাহ সেপ্টেম্বরে গিয়ে ঠেকেছে। ন্যাপ থেকে জানা যায়, শীতকাল ও বর্ষা পূর্ববর্তী সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। কিন্তু বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ছে। এসব কারণে, শীতকালে অনেক বেশি শুষ্ক এবং বর্ষাকালে অনেক বেশি ভেজা আবহাওয়া থাকছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোত বাংলাদেশে তীব্র বৃষ্টিপাত হয়েছে। এইসব তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছেই।

এর মাঝে রংপুরের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিগত ৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হবে এবং পশ্চিমাঞ্চলে এই পরিমাণ কমতে থাকবে। কিন্তু ২০৫০ সালে সারা দেশেই বৃষ্টিপাত বাড়বে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে গত ৩০ বছর ধরে উপকূলবর্তী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর ৩ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলের মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় নয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশ প্রায় প্রতিবছরই এমন অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক অ্যাটলাস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে দেশের প্রায় ২২টি জেলা খরার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে খুবই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ছয় জেলা। খরাপ্রবণ এসব এলাকা মূলত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। ন্যাপে বলা হয়েছে যে, প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি নদী ভাঙনের শিকার হয়। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) তথ্যের বরাত দিয়ে এখানে বলা হয়েছে যে, ১৯৭৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যমুনা নদীর ভাঙন ছিল প্রায় ৯৪ হাজার হেক্টর এবং বৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর। এই সময়ের মাঝে পদ্মায় সাড়ে ৩৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমি ভেঙেছে এবং গড়েছে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও কম। এছাড়া, যমুনায়ও ২৫ হাজার ২৯০ হেক্টর জমি বিলীন হয়ে গেছে। সিইজিআইএস বলছে, গত ২২ বছরে পদ্মা ও যমুনা নদীর ভাঙনে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে। ভারি বা অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুলাই এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টবরে এরকম বন্যা দেখা যায়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল সবসময় আকস্মিক বন্যার ঝুঁকিতে থাকে। এতে করে এই অঞ্চলের কৃষি খাত তীব্র ক্ষতির মুখে পড়ে। অথচ, দেশের ১৮ শতাংশ ধান উৎপাদন হয় এই অঞ্চলে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে বর্ষার আগে ও বর্ষার সময়ে বৃষ্টিপাত বাড়বে, তাই তখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার পরিমাণ আরও বাড়বে। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন বন্যা দেখা যাচ্ছে এবং এতে করে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক উদ্বেগও বাড়ছে। গত দুই দশকের মাঝে ২০০৪ সালে ঢাকার বন্যা উল্লেখ করার মতো। কারণ ওইসময় ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। সেই বন্যায় শহরের ৮০ শতাংশ এলাকার পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বাংলাদেশে প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের প্রকোপ থাকে বেশি। বজ্রপাতের মাত্রা এবং মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনা করে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিকে বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সেজন্য ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ন্যাপের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছে এবং আহত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। এদের মাঝে বেশিরভাগই পুরুষ। বজ্রপাতে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি ঘটে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায়। জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান-ন্যাপ) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অতীতের রেকর্ডগুলো বলছে যে, বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে।

বাংলাদেশ উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় প্রতিবছর বর্ষাকালের আগে শূন্য দশমিক শূন্য এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তবে বর্ষাকালে সেই তাপমাত্রা থাকে শূন্য দশমিক শূন্য ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে শীতকালে সেটি কমে শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য চার ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় এবং বর্ষা-পরবর্তী সময়ে সেটি হয় শূন্য দশমিক শূন্য ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বলা হচ্ছে, নিকটবর্তী সময়ে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এবং, এরপর এটি বাড়তে বাড়তে এক থেকে এক দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। শুধু তাই না, বঙ্গোপসাগরের অম্লতার মাত্রাও প্রতিবছর একটু একটু করে বাড়তে পারে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি ও অম্লতা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব আছে। এর ফলে সমুদ্রের ইকো-সিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন স্বল্পতাও তৈরি করতে পারে। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে সরকারকে সুনিয়ন্ত্রিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

এরইমধ্যে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার দিকে জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম অফ অ্যাকশন’ কিংবা ‘জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল এবং কর্ম পরিকল্পনা’ এর মতো উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন নীতিতে তার সংযুক্তির কথা জানান দিয়েছে। উপসংহারে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য, বিশেষ করে এর কৃষি খাতের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে অবশ্যই তার এজেন্ডায় জলবায়ু পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থার কার্যপরিধিও বাড়াতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান উজ্জ্বল অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ তো রক্ষা করবেই, সেই সঙ্গে লক্ষাধিক নাগরিকের জীবিকা রক্ষা করার চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে সুস্পষ্ট। তবে পরিকল্পিত উদ্যোগ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। টেকসই উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত