ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

করোনা সংক্রমণ বাড়ছে

নিতে হবে সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা

নিতে হবে সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা

আবার করোনার সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় দেড় বছর পর বাংলাদেশে গত ৫ জুন করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫০০। আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০। তিন বছর পর ২০২৩ সালের মে মাসে করোনার কারণে জারি করা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মহামারির শুরু থেকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) তথ্যমতে, চলতি বছর সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো করোনার নতুন দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি। এগুলো অমিক্রন জেএন.১-এর একটি উপশাখা।

সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এক্সএফজিতে। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণক্ষমতা বেশি। ফলে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে সাধারণ মানুষকে সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ব্যক্তিগতভাবে সুরক্ষিত থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি মানুষ যাতে করোনায় সংক্রমিত না হয়, সে জন্য সরকারকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং তা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। ইতোপূর্বে তিন বছর বাংলাদেশ এবং বিশ্ব মারণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপন্ন ছিল। তখনই আমরা এ থেকে রক্ষা পাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করি। সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকেই এখন আমাদের কী করণীয়, তা আমরা জানি। কিন্তু শুধু জানি বললেই সুরক্ষা পাওয়া যাবে না। প্রয়োজন হচ্ছে সুরক্ষিত থাকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাসংক্রান্ত বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও বিশ্ব থেকে করোনা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। মাঝে মাঝেই এর নানা নতুন ধরন ফিরে এসে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এবারও ঠিক দুই বছর পর বাংলাদেশে এক্সএফজি ও এক্সএফসি নামের দুটি ধরন দেখা যাচ্ছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে আবার দেখা গেছে এনবি ১.৮.১ নামের একটি নতুন ধরনের বিস্তার। এ ধরনটির সংক্রমণের হার বেশি এবং ক্রমেই তা ছড়াচ্ছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশিদের ভারত সফর এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

করোনা প্রতিরোধের পূর্বাভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছর এর প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত থাকায় আমাদের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়ার তেমন প্রস্তুতি নেই। বাংলাদেশকে খুব দ্রুত এই প্রস্তুতি নিতে হবে। এরইমধ্যে সরকার এ কাজ শুরু করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও কুর্মিটোলা হাসপাতালকে তারা প্রস্তুত করছেন। চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতাল ও সিটি কর্পোরেশনের মেমন-২ হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে।

আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে এখনই দেশজুড়ে আমাদের এ প্রস্তুতি আরও বাড়াতে হবে। প্রতিবেশী দেশে যেহেতু করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, আমাদের দেশেও তা বাড়তে পারে। আগে ঠিক এমনটাই দেখা গেছে। সরকার জনসাধারণের জন্য ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এ নির্দেশনা যাতে দেশজুড়ে পালিত হয়, সরকারকে সে ব্যবস্থাও নিতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনসচেতনতার বিষয়টি। এর জন্য যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা দরকার, সরকারকে সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। একজন সাধারণ নাগরিক করোনার সংক্রমণ থেকে কীভাবে দূরে থাকতে পারেন, চিকিৎসা কী, কোথায় সেই চিকিৎসা মিলবে, এসব বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে এবং তথ্য পৌঁছে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক নাগরিককে সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কেননা এতে ব্যক্তিমানুষই আক্রান্ত হয়। ইতোপূর্বে আমরা সাধারণ মানুষকে সুরক্ষার বিষয়টিকে উপেক্ষা করতে বা গুরুত্ব না দিতে দেখেছি। কিন্তু এ রকম করলে আমাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।

জাতিগতভাবে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির কবলে পড়বে। সুতরাং যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, দেশের প্রত্যেক নাগরিক সেই নির্দেশনা মেনে চলবেন বলে আমরা আশা করছি। আক্রান্ত হলে কোথায় কীভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে, জেনে রাখতে হবে সেসব তথ্য। শরণাপন্ন হতে হবে সর্বশেষ আধুনিক যথাযথ চিকিৎসার। ব্যক্তিমানুষের সুরক্ষাই হোক জাতিগত সুরক্ষার রক্ষাকবচ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত