ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সার কীটনাশকের দাম কমাও, কৃষক বাঁচাও

মাহমুদুল হাসান শোভন
সার কীটনাশকের দাম কমাও, কৃষক বাঁচাও

কৃষিজমিতে সার ও কীটনাশক দেওয়া লাগে কারণ মাটি থেকে ফসল পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় না, আর পোকামাকড় ও রোগবালাই ফসল নষ্ট করে দেয়। সার ফসলকে পুষ্টি জোগায়, আর কীটনাশক পোকামাকড় ও রোগ থেকে রক্ষা করে, ফলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

সার এবং কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা বর্তমানে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় কৃষকদের জন্য ফসল উৎপাদনের ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন। অনেক কৃষক প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার বা কীটনাশক ব্যবহার করতে পারছে না। সঠিক পরিমাণে সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করতে পারার ফলে ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে। অনেকে কম দামের নিম্নমানের সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে বাধ্য হন, যা মাটির উর্বরতা ধ্বংস করে দেয় এবং ভবিষ্যতের ফসল উৎপাদনেও সমস্যা তৈরি করে। এতে করে রোগবালাই বেড়ে যায় যা ফসলের গুণমানও নষ্ট করে। অনেক কৃষক এনজিও বা মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিচ্ছেন। ঋণ শোধ করতে না পেরে তারা ঋণজালে আটকে পড়ছেন।

অন্য অঞ্চলের বা দেশের আধুনিক কৃষিপণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে স্থানীয় কৃষকরা পিছিয়ে পড়ছেন কারণ তাদের উৎপাদন খরচ বেশি কিন্তু বিক্রয়মূল্য কম। কৃষকদের আয় কমে যাওয়ায় পরিবারে দারিদ্র্য বাড়ছে। অনেক তরুণ কৃষিকাজ ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছেন, ফলে গ্রামে কৃষিশ্রমিকের সংকট দেখা দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি লোকসানের আশঙ্কায় অনেক কৃষক চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পতিত জমির পরিমাণ বাড়ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এতে জাতীয়ভাবে খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি বা দাম বৃদ্ধি দেখা দিতে পারে।

সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির সমস্যা মোকাবিলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক করণীয় হলো কৃষকদের জন্য সারের ওপর সরাসরি ভর্তুকি প্রদান। কীটনাশকের আমদানি ও উৎপাদনে ভর্তুকি দিয়ে বাজারমূল্য কম রাখা। দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা। সারের দোকান ও কীটনাশক বিক্রেতাদের নিয়মিত মনিটরিং করা। কৃত্রিম সংকট বা মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। দাম নির্ধারণে কৃষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

সরকার নিজে সার ও কীটনাশক উৎপাদন বা আমদানির উদ্যোগ নিতে পারে। সরকারি বিপণন কেন্দ্র বা কৃষি অফিস থেকে সরাসরি কৃষকদের কাছে বিক্রি করা। জৈব সার, কম্পোস্ট, ভার্মি সার ও প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পরিবেশবান্ধব কৃষিপদ্ধতি শেখানো। স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহিত করে দেশীয় সার কারখানার আধুনিকায়ন ও উৎপাদন বাড়ানো। কীটনাশকের কাঁচামাল দেশে উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানো। কৃষকদের কাছে মোবাইল অ্যাপ, এসএমএস বা কৃষি অফিসের মাধ্যমে দাম ও ভর্তুকির তথ্য পৌঁছে দেওয়া। কোথা থেকে সাশ্রয়ী দামে সার বা কীটনাশক পাওয়া যাবে, তা জানানো। সার ও কীটনাশকের দাম নিয়ন্ত্রণ শুধু কৃষকের স্বার্থ রক্ষা নয়, এটি জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও টেকসই কৃষির জন্য অপরিহার্য। এজন্য সরকারি-বেসরকারি ও কৃষক সমাজ- সব পক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত