ঢাকা রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসলামি মূল্যবোধের শিক্ষা কেন প্রয়োজন

মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন
ইসলামি মূল্যবোধের শিক্ষা কেন প্রয়োজন

বর্তমান জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে- সেক্যুলারিজমভিত্তিক। ব্রিটিশ প্রদত্ত নিয়মেই চলছে এদেশের শিক্ষানীতি। কুরআন হাদিস শিক্ষা বাদ দিয়ে ইসলাম শিক্ষার বিপরীত একটি শিক্ষাব্যবস্থা। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ ইসলামকে শিক্ষার্থীদের কাছে পেশ না করার অপচেষ্টা চলছে। বিগত কয়েক বছর কোরআন হাদিস শিক্ষাকে সংক্ষিপ্ত করে যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে, তাতে ইসলাম শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষাকে সিলেবাস থেকে সংকোচিত করা হয়েছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ইসলাম ধর্মশিক্ষাকে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। ফলে আদর্শ, সৎ, চরিত্রবান নাগরিক বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে না।

কবি ইকবাল বলেছেন, ধার করা শিক্ষায় আদর্শ মানুষ তৈরি হতে পারে না। আদর্শ ও নৈতিক চরিত্রবান মানুষ তৈরি করতে হলে অবশ্যই ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যে ধর্ম মানুষকে ন্যায়নীতি আদর্শের শিক্ষা দিয়েছে। অন্যকোনো ধর্ম মানুষকে এতগুলো ন্যায়নীতি আদর্শের শিক্ষা দেয়নি। ইসলাম শিক্ষার অভাবে মুসলিম জাতি আজ সমগ্র বিশ্বে প্রতি পদে পদে বিপর্যস্ত ও পদদলিত। ন্যায়নীতি শিক্ষার অভাবে আজ অফিসের বড় কর্তা থেকে শুরু করে বয়-বেয়ারা পর্যন্ত সর্বস্তরের কর্মচারী দুর্নীতিগ্রস্ত। ঘুষ, দুর্নীতি, ধর্ষণ, কালোবাজারি, টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ মানুষ প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত। এদেশের শতকরা ৯০ শতাংশ অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে- কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়ুয়াদের দ্বারা। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ, প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, খুনের মত নৃশংস ও মর্মান্তিক খবর প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছ। এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা একান্ত অপরিহার্য। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়। আর নৈতিকতা মানুষকে অপরাধ থেকে দূরে রাখে।

ইসলামের মূলনীতি শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা মৃত্যু যন্ত্রণা, হাসরের ময়দানে পার্থিব জীবনের কৃতকর্মের হিসাব দান, পাপ, পুণ্যের বিচার, বেহেস্তের শান্তি ও জাহান্নামের শাস্তি সম্পর্কে অধ্যায়ন করে খোদাভীরু ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী সৎ-নিষ্ঠাবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাগ্রহণ করার পর নৈতিকতা ও মানবিকতা থেকে শিক্ষার্থীদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। এজন্য পবিত্র কোরআনে সর্বপ্রথম কোরআন হাদিসের এলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ করা হয়েছে। কোরআন হাদিস ও ইসলামি জ্ঞান অর্জন ছাড়া কোনো জ্ঞানই পরিপূর্ণতা লাভ করে না। কোরআন ও হাদিস জেনারেল শিক্ষায় পরিপূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত না করার কারণে অধিকাংশ ছাত্ররা বিপদগামী হচ্ছে। ইসলামি জ্ঞান ও নৈতিকতার অভাবে কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের মধ্য নীতি আদর্শের অভাব দিন দিন পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার কারণে জেনারেল শিক্ষিত ছাত্ররা যখন-তখন বিভিন্ন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তারা রাজনীতিতে জড়িয়ে বিভিন্ন খারাপ কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে।

কোমলমতি ছাত্ররা স্কুল-কলেজে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারামারি, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি ভাঙচুর, হল দখল, সিট বাণিজ্য, মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন সময় ছাত্ররা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে কলেজ ও ইউনিভার্সিটির বহু শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিত করার নজির সৃষ্টি করেছে। অথচ কখনও শুনিনি কোনো মাদ্রাসাপড়ুয়া ছাত্র মাদ্রাসার দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি, মাদকদ্রব্য গ্রহণ কিংবা মাদ্রাসার শিক্ষক ধরে পেঠাতে। মাদ্রাসা শিক্ষায় সর্বপ্রথম কোরআন হাদিস শেখানো হয় বিদায় তারা নৈতিক শিক্ষা অর্জন করে। তারা জানে- মা-বাবাকে, শিক্ষককে কীভাবে সম্মান করতে হয়। প্রতিবেশীর সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়। কোরআন হাদিসের এলম অর্জন করার কারণে মাদ্রাসার ছাত্ররা সহজেই ভুল পথে পা বাড়ায় না। তারা সহজেই মাধকদ্রব্য গ্রহণ, খুনখারাবি ও ধর্ষণের মতো জঘণ্য কাজে লিপ্ত হয় না।

একজন ছাত্রছাত্রী জীবনে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক-প্রতিবেশীর সঙ্গে কীভাবে আচরণ করবে। তাদের কীভাবে সম্মান করতে হবে এবং কীভাবে তাদের হক আদায় করবে, তার যথাযত নির্দেশনা কোরআন হাদিস শিক্ষা অর্জন করে লাভ করে। মানুষের চরিত্র গঠনে শ্রেষ্ঠ কারখানা হচ্ছে মাদ্রাসা। অথচ বর্তমান সময়ে প্রচুর সংখ্যক কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা মাদকাসক্ত। তারা কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে নারীদের যৌন হয়রানি করছে।

শুধু তাই নয়, তারা প্রায় সময় ধর্ষণের মতো জঘণ্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে।

আগেরকার যুগে মাদ্রাসায় পড়ে বড় বড় মুসলিম মনীষীরা বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও গণিত শাস্ত্রে অবদান রেখেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে যতগুলো অবদান, সবগুলো আল কোরআন রিচার্স করে অর্জন করেছে। নানান রকম চিকিৎসাপদ্ধতির আবিষ্কারের পেছনে মুসলমানদের অবদান রয়েছে- এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। একজন ডাক্তার ও একজন আইনজীবী মধ্য ধর্মীয় জ্ঞান না থাকার কারণে সে তার পেশাকে সেবামূলক পেশা হিসেবে নিচ্ছে না।

তাহলে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়ে আধুনিক শিক্ষা অর্জন করে লাভ কি। অথবা ধর্মীয় শিক্ষা স্কুল-কলেজ থেকে বাদ দিয়ে ব্রিটিশদের চালু করা আধুনিক শিক্ষার দরকারটা কি? সন্তানের জন্য যে শিক্ষিটা আগে দরকার সেটা হলো- নৈতিক শিক্ষা। এই নৈতিক শিক্ষাটা জানার জন্য কোরআন হাদিস পড়তে হবে।

এজন্য আমাদের বর্তমান জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলা, গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান শিক্ষার পাশপাশি কোরআন হাদিস শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোরআন হাদিসের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে একজন সত্যিকারের নৈতিক চরিত্রবান ও বিবেকবান মানুষ তৈরি করতে হবে। বিশ্ব মানবতার শান্তি প্রতিষ্ঠায় নৈতিক গুণাবলিসমৃদ্ধ জাতি গড়ে তোলার একমাত্র পথ হলো সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে চলা। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবনাদর্শ। ইসলামি শিক্ষা হচ্ছে- দুনিয়া ও আখেরাত উভয়মুখী শিক্ষাব্যবস্থা। দুনিয়া ও আখেরাত উভয় সফলতা অর্জন করার জন্য ইসলামি শিক্ষা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত