বছরের ব্যবধানে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। এবার আমনের পর বোরো ধানের বেশি ফলন হলেও চালের দাম কমেনি; বরং বেড়েছে। গত এক বছরে দেশে চাল, সয়াবিন তেলসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কিছুটা কমেছে মুরগি, ডিম ও চিনির দাম। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় এমনিতেই সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা। তার ওপর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য চালের দামের অসহনীয় বৃদ্ধি সংকটকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে। চাল উৎপাদনে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পান না; অন্যদিকে ভোক্তাকে বেশি দরে চাল কিনতে হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা অধিক মুনাফার আশায় চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ থেকে ৩৯ শতাংশ। কারণ গত বছরের জুনে ৫২ থেকে ৫৮ টাকায় এই চাল বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৬০ থেকে ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪৮ থেকে ৫০ টাকার মোটা চাল বর্তমানে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি। ৬৫ থেকে ৭২ টাকার সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮২ টাকা। দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, গত বছরের জুনে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৩ টাকায়, বর্তমানে তা ১৮৮ টাকায় ঠেকেছে। মাছের দামের ক্ষেত্রে একই চিত্র। পাঙাশ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন মাছের দাম বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে সবজির দামও বেড়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাসির-উদণ্ডদৌলা গনমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা চাল, ডাল, মুরগি, ডিম থেকে শুরু করে সবজির পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। নির্ধারিত দরে কোনো কোনো পণ্য বিক্রি হয়; আবার কোনোটা হয় না। কমবেশি দরে বিক্রি হয়। আমাদের লোকবল দিয়ে বাজার যাচাই করে তার তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাজারে যাতে এসব পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি হয়, আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি।’
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে চালের দাম কারা এবং কীভাবে বাড়াচ্ছে, সেই সিন্ডিকেট খুঁজে বের করতে হবে। অভিযোগ আছে, মিলমালিকরা ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়াচ্ছেন। ভোক্তা অধিদপ্তর খুচরা পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে কিছু জরিমানা করে থাকলেও তাতে কোনো কাজ হয় না। মধ্যস্বত্বভোগীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
বোরো ধানের মৌসুম এলেও চালের এমন মূল্যবৃদ্ধি কেউই স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না। বাজারে যাতে যৌক্তিক দামে পণ্য পাওয়া যায়, সে জন্য সরকারকে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাজার নিয়ন্ত্রণে বেশ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছিল। যে কার্যক্রমে ছাত্র প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেছিল; কিন্তু সেই অবস্থায় এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। প্রত্যাশা করছি, পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার নিত্যপণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।