দেশে সামাজিক অস্থিরতা যেন থামছেই না। নৃশংস হত্যাসহ একের-পর এক এমন সব ঘটনা ঘটছে- যেগুলো শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, রীতিমতো উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিচ্ছে। ক্ষমতাবানদের যোগসূত্র না থাকলে এ ধরনের অপরাধ করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আর রাজনৈতিক শক্তি অনেক বড় শক্তি। তাই এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে হলে সমাজের শক্তিমানদের শক্তির অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে সমাজকে অস্থিতিশীল করে এমন সব নৃশংস ঘটনা নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত আইনের পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় শক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সর্বশেষ, গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগ নামে এক ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ীকে দিনে-দুপুরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের খবর, চাঁদাবাজির জেরে এ হত্যাকাণ্ড। যদিও পুলিশ বলছে, হত্যার পেছনে রয়েছে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও পূর্বশত্রুতা। হত্যার পেছনে যা-ই থাকুক না কেন, এমন ঘটনা যে জনমনে আতঙ্ক ছড়ায় তা না বলাই ভালো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ হত্যার ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, উৎসুক জনতা হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করলেও কেউ প্রতিরোধে কোনো চেষ্টা করেননি। তাই এ প্রশ্ন উঠেছে- হত্যাকাণ্ডটি কি পরিকল্পিত?
এ ঘটনায় এরইমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদিকে এর জেরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের মোট পাঁচজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। লক্ষণীয় হলো- চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে বিভিন্ন পক্ষ নানাভাবে স্বার্থসিদ্ধি করতে বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। তাদের প্রতিহত করা যাচ্ছে না। এসব কাজ করতে গিয়ে তারা কখনোবা রাজনৈতিক ব্যানার ব্যবহার করছে। স্বার্থের সংঘাতে নিজেদের মধ্যে খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে। বিষয়গুলো সামাজিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে এসব ঘটনার মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী শক্তিগুলো মতলব হাসিলের অপচেষ্টা করছে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, গণঅভ্যুত্থানবিরোধী শক্তিগুলো অভ্যুত্থানের পর থেকে দেখানোর চেষ্টা করছে- অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়; কিন্তু বিষয়গুলো যখন বেড়ে যায় এবং প্রতিরোধে দুর্বলতা দেখা দেয়; তখন গভীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময় বিশ্বজিৎ হত্যা দেখেছি। ওই ঘটনায় জড়িতরা অনেকে পার পেয়ে গেছে। অবশ্য তখন দেশে আইনের শাসন বলতে কিছু ছিল না। এখনও ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসছে তখন, যখন এগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। এটি কাঙ্ক্ষিত নয়। প্রকৃতপক্ষে সমাজে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায়ে থাকে তখন, যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে চলে। রাজধানীর মিটফোর্ডে সংঘটিত এমন নৃশংস হত্যার সঙ্গে যে সমাজের ক্ষমতাবান ও রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকতে পারে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ক্ষমতাবানদের যোগসূত্র না থাকলে এ ধরনের অপরাধ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আর রাজনৈতিক শক্তি অনেক বড় শক্তি। তাই এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে হলে সমাজের শক্তিমানদের শক্তির অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে সমাজকে অস্থিতিশীল করে এমন সব নৃশংস ঘটনা নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত আইনের পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় শক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।