গত কয়েকদিন ধরে শরীর মন কিছুই ভালো নেই। চোখভেজা সংবাদ দেখতে দেখতে মহাক্লান্ত হয়ে গেছি।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন সমাজ খুবই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে মিটফোর্ডের ব্যবসায়ী সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যার দৃশ্য দেখে অনেকে আবেকে আপ্লুত হয়েছেন। আজকাল অবশ্য একটা বিষয় সুস্পষ্ট দেখছি, আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন।
কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণকারী, সমাজের কুখ্যাত খুনি, গণপিটুনি না দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করুন। বাংলাদেশ সরকার পরিবর্তনের পর দেশের পটভূমি রাজনীতির প্রেক্ষাপটে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল বিএনপির জনপ্রিয়তা ক্রমশ হারাতে বসেছে, তৃণমূল পর্যায়ের কিছু অসৎ নেতা দলের নাম ভাঙিয়ে সমগ্র দেশজুড়ে যে অরাজকতা কায়েম করছে আসন্ন নির্বাচনের জন্য শুভ ফলাফল হচ্ছে না। যা হোক রাজনীতি তর্ক-বির্তক সমালোচনা থাকবেই, এটা চিরাচরিত নিয়ম।
পবিত্র গ্রন্থে জীব হত্যা মহাপাপ এখানে যদিও জীবের কথা বলা হয়েছে। যেমন পিঁপড়াও আপনি পা দিয়ে পিষিয়ে মারতে পারেন না। আর জীবের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ জীব হচ্ছে মানুষ। সে যে ধর্মের হোক তাতে কোনো সমস্যা নেই। তাকে সম্মান দিতে হবে সে মানুষ। গুণিজনরা বলেন, মানুষের মাঝেই সর্গ-নরক। তো সে মানুষকে আপনি প্রস্তরখণ্ডের আঘাতে দিবালোকে মৃত্যু নিশ্চিত করা হলো, লাশের উপর নৃত্য করা হলো, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোহাগ হত্যার ভিডিও দেখেছেন, চোখ বেয়ে অশ্রু টলটল করছিল, বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। কি নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকরা সোশ্যাল মিডিয়া তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে, জাতীয় সংবাদপত্র গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছেন। চলুন একটু পেছনে ফিরে যাই; আজ থেকে ২০ বছর আগের সমাজের হালচাল আর বর্তমান হালচাল এক নয়।
আমরা যে দিন দিন প্রযুক্তির ব্যবহারনির্ভর হয়ে গেছি, যতটা না সুফল তার চেয়ে কুফলে বাঙালি বেশি আগ্রহী। এহেন সমাজের কত শতাংশ লোক আর কত শতাংশ মানুষ হিসাবটা বহু আগেই করেছিলাম, এবছর অমর একুশে গ্রন্থ ২০২৫ একটা কাব্যগ্রন্থ ছিন্নপত্র প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল গ্রন্থটির ‘সব দেখি ছারপোকা’ অনেকে আবার এটাও বলেছেন: সব দেখি ছারপোকা, এই নামের কারণ কি? উওরে বলেছি, আজকাল মানুষ নেই সব দেখি ছারপোকা। যাহোক, গত কয়েক দিন ধরে মেহেরিন একটি মেয়ের মা-বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন যা আদালত পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। একটা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া মেয়ে, আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে বলছিল-
‘আমার জন্ম আমার সিদ্ধান্ত ছিল না। আমার বাবা-মা তাদের জৈবিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমাকে পৃথিবীতে এনেছেন।’ এ যেন নিজের অস্তিত্ব নিয়েই বাবা-মাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। অপর পাশে, আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তার কর্মজীবী মা-বাবা। নিরব, মাথা নিচু, একবারও মেয়ের মুখের দিকে তাকানোর সাহস করেননি। মেয়ের এমন অভিযোগ শুনে আদালতে উপস্থিত সবার হৃদয় কেঁপে উঠলেও, তারা ছিলেন নিঃশব্দ। মেয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরে তার আইনজীবী বললেন- ‘সে চায় আমেরিকায় গিয়ে পড়তে। কিন্তু তার মা-বাবার সেই সক্ষমতা নেই। বিচারক কথা বলার সুযোগ দিলেও মা-বাবা কোনো কথা বলেননি। নীরবে মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলেন। এই তবে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রতিদান?
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এই মেয়ে শুধু অভিযোগ করেই থেমে থাকেনি। তার চাহনি, ভাষা, শরীরী ভাষা- সব কিছুতেই ফুটে উঠেছে এক ধরনের ঔদ্ধত্য, এক ধরনের অবমাননাকর মনোভাব। সে যেন বাবা-মা নয়, একজন অপরাধীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে! শুধু ফ্লুয়েন্ট ইংরেজিতে কথা বললেই কি শিক্ষিত হওয়া যায়? এই মেয়ের ব্যবহার, তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, সব কিছু দেখে প্রশ্ন জাগে- এটা কি শিক্ষার ফল, নাকি এক বিকৃত উচ্চবিলাসের বহিঃপ্রকাশ? এ ধরনের নোংরা মনমানসিকতার মেয়েরা সমাজে, শিক্ষায় এবং পরিবারে বিষ ছড়ায়। তারা নিজের অর্জনের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে আঘাত করে মা-বাবার আত্মমর্যাদায়। শিক্ষা কি তাকে মানবিকতা শেখায়নি? সমাজ তাকে নৈতিকতা দিতে ব্যর্থ হলো কেন? এই মেয়ে যদি এই সমাজের ‘সুশিক্ষিত’ প্রতিনিধি হয়, তবে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে?
পরিবার ছোট থেকে সন্তানকে মিস গাইড করলে তার প্রভাব ১০০ শতাংশ পড়বে। পোশাক, কথা বলার ধরন অবশ্যই ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ। ক্লাস আর টাকা আর দুই-চারটে ইংরেজিতে কথা বলা এক বিষয় নয়। সময় থাকতে সন্তানের দিকে নজর দিন সন্তানকে ধর্ম শিক্ষা দিন, নৈতিকতা শিখান, সন্তানকে অভাবও শিখান মাঝেমধ্যে। নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয় রীতিমতো চলছে আজকাল।
তোফাজ্জলকে যেদিন ভাত খাওয়া শেষে নির্মমভাবে খুন করা হলো। কয়েক দিন সারা দেশে তোলপাড় হয়েছিল।
কলেজের সামনে হাসি দেওয়ার অপরাধে খুন করা হলো, নিত্য দিনে খুন ধর্ষণ ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি হচ্ছেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখন রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, মানুষ হিসেবে আমরা কবে সভ্য হবো, সম্মান, শ্রদ্ধা, স্নেহ, বৈষম্যহীন পরিবেশ সমগ্র বাংলাদেশ কবে হবে। আমি মাঝেমধ্যে শহরের অলিতে-গলিতে রাজপথে চলতে গিয়ে চায়ের দোকানে চুপ করে বসে সাধারণ মানুষের কথা শুনি। ষাটোর্ধ একলোক বলল; বাংলাদেশের রাজনীতি সবচেয়ে নোংরা, আর প্রতিহিংসার রাজনীতি অবসান না হলে দেশের এবং জাতির মঙ্গল হবে না। রাজনীতির প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা না বলাই শ্রেয়। আসুন সবাই বিশুদ্ধ কোমলপ্রাণ মানুষ হই, চোখভেজা সংবাদ দেখতে চাই না, চাপা কান্নায় জর্জরিত কাল মুছে যাক।