‘আয়রে পাখি লেজঝোলা/খোকন নিয়ে কর খেলা, খাবি-দাবি কলকলাবি/খোকাকে মোর ঘুম পাড়াবি।’ এই জনপ্রিয় ছড়াটি পড়তে গেলেই লম্বা লেজের পাখিটির কথা মনে পড়ে। ছোট বেলায় বাড়ির পাশে গাছের ঝোপে দৃষ্টিকাড়া পাখিটি দেখলেই ছুটে যেতাম লেজ ধরতে। তবে ধরার আগেই ঝুলন্ত লেজ দোলাতে দোলাতে উড়ে যেত দূর বহু দূর। ঘুড়ির মতো লেজ ওয়ালা এসব পাখি দেখে পেছনে পেছনে ছোটেনি এমন শিশু কিশোর পাওয়াই ভার। বিস্ময় জাগানো আড়ালে আবডালে থাকতে পছন্দ করা সেই লেজ ঝোলাকে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। এক সময় বাংলার প্রতিটি গ্রামেই দেখা মিলত লেজঝোলা পাখির। ছোটখাটো গড়ন, কিন্তু চলাফেরায় ছিল অদ্ভুত ছন্দ। বাঁশঝাড়, পুকুরপাড় কিংবা গাছগাছালিতে বসে সে যখন তার লম্বা লেজটা ফ্যানের মতো মেলে ধরত, তখন প্রকৃতি যেন এক ছন্দময় কবিতায় রূপ নিত। আজ সেই চেনা ডাক, সেই চঞ্চল ছায়া হারিয়ে যাচ্ছে চোখের আড়ালে। প্রশ্ন জাগে কোথায় হারালো লেজঝোলা পাখি? কেন এই পাখি হারিয়ে যাচ্ছে এর পেছনের কারণগুলো নিয়ে আজকের এই লেখা। লেজঝোলা পাখি বা খয়েরি হাঁড়িচাচা কাক পরিবারভুক্ত একটি সুদর্শন পাখি। এর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- দৈর্ঘ্য লেজসহ প্রায় ৫০ সেমি, শুধু লেজই ২৩ সেমি। পিঠ লালচে-বাদামি, বুক কালচে-ধূসর, ডানায় সাদা দাগ। ডাক কিটার-কিটার বা কাকের মতো কর্কশ শব্দ। খাদ্য হিসেবে পোকামাকড়, ফল, অন্যান্য পাখির ডিমণ্ডবাচ্চা, এমনকি ছোট সাপও খায়। এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাউড়া, ঢেঁকিলেজা, কুটুম পাখি নামেও পরিচিত। কিন্তু আজ কোথায় গেল তারা? এক সময় যারা ছিল প্রকৃতির সঙ্গী, তারা আজ নিঃশব্দে সরে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে নানা কারণ: প্রতিনিয়ত গাছ কাটা ও বন্য প্রকৃতি ধ্বংসের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে এদের আবাসস্থল। অধিক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারে কমে যাচ্ছে পোকামাকড়, যা এদের মূল খাদ্য। আজকের প্রজন্ম প্রকৃতির চেয়ে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ায় পাখিপ্রেম হারাচ্ছে। পাখিরা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী।