ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নওগাঁ সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ চাই

ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়
নওগাঁ সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ চাই

নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ জেলার সুনামধন্য একটি বিদ্যাপীঠ। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক চেহারা ফিরিয়ে দিতে সব শিক্ষার্থীর নায্য অধিকার নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গভীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়। এরমধ্যেই ৫ আগস্টের পরে আবার এক ধরনের পেশিশক্তির ছাত্র রাজনীতির উদ্ভব ঘটেছে। যা পুরো ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে আশাহীনতায় ঠেলে দিয়েছে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার ৯নং যে যৌক্তিক দাবিটি ছিল জুলাই অভ্যুত্থানে তা এখন অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ। নওগাঁ সরকারি কলেজের দিকে এবার শুভদৃষ্টি ফেরাতে হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষের অনিয়ন্ত্রনের ফলে শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে এক মহলের কাছে জিম্মি বানানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না তাদের নায্য অধিকার। বরং তারা দিনদিন উপেক্ষিত হচ্ছে নিজ ক্যাম্পাসে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকার শাসিত ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিকরণের নোংরা বলয় থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মুক্তচিন্তার চর্চা, একাডেমিক লেখাপড়ার গতিশীলতা, সঠিক নেতৃত্ব, মেধাবী নেতা নির্বাচন, মূল্যবোধের যথার্থ ব্যবহার, কাউন্সিলিং ইত্যাদিতে আমাদের সক্রিয় হতে হবে। তবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদ প্রেক্ষাপট যখন করুণ দশায় সজ্জিত। যেখানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ২০ থেকে ২৫ বছর সময় ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের খরায় ভুগছে সেখানে নওগাঁ সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদ নিয়ে দাবি তোলা কতটুকু সমীচীন? নওগাঁ সরকারি কলেজ ধীরে ধীরে একাডেমিক উন্নতি করছে তবে আমরা শুধু একাডেমিক সনদকে ফলপ্রসূ করতে চাই না পাশাপাশি একটি শক্তিশালী মেধাবৃত্তির সংস্কার চাই।

তাছাড়া নওগাঁ সরকারি কলেজে রয়েছে দীর্ঘদিনের নানাবিধ সংকট। এসব সংকট থেকে উত্তরণ এনে দিতে পারে ছাত্র সংসদ। আমরা সুষ্ঠু ধারার নায্য অধিকারভিত্তিক নেতৃত্ব আশা করি। ছাত্র সংসদ নির্বাচন সঠিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটায়। নওগাঁ সরকারি কলেজকে দলীয়করণের রাজনৈতিক থাবা থেকে মুক্ত করতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য কলেজের সার্বিক চেহারা ও শিক্ষার প্রসার বিঘ্নিত করে। এক্ষেত্রে ছাত্র সংসদের ভূমিকা হবে খুবই কার্যত। তখন ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর কলেজে দলীয় প্রভাব বিস্তার করা কঠিন হবে। প্রতিটি রেজিম চাইবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালগুলোতে তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাখতে। এতে করে তারুণ্য শক্তিকে পেশিশক্তিতে রূপান্তর করা যায় খুব সহজেই। আর তারুণ্যের মূল শক্তিকেন্দ্র হলো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। ছাত্র সংসদ না থাকার ফলে এভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মুক্ত চিন্তার চর্চা থেকে পিছিয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিকভাবে দল-মত ও পথের পার্থক্য থাকলে ও কলেজ ক্যাম্পাসে তা প্রকাশ করা বা চর্চা করার সুযোগ থাকে না। যুগের পর যুগ ধরে নওগাঁ সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাড়া এসব সংকট আরও প্রকট রূপ ধারণ করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গনতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিটি শিক্ষার্থীর নায্য অধিকার ফিরিয়ে দেবার একটি শক্তিশালী ম্যানডেট হয়ে দাঁড়ায়। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গঠনমূলক মতামত ও আলোচনা, শিক্ষার মান ও প্রসার বৃদ্ধি, ক্যাম্পাসের সুস্থ ও আলোকিত পরিবেশ, ছাত্র ও কর্মচারীর মধ্যে সম্প্রীতি-সু-সম্পর্ক, সামাজিক ও রাজনৈতিক চর্চার পাঠ, ক্লাসরুমের গনতান্ত্রিক চেহারা ইত্যাদি। নওগাঁ জেলার সুনামধন্য একটি বিদ্যাপিঠ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে অগণতান্ত্রিক অবকাঠামো ও সংকটময় জঞ্জালের স্তুপে। এসব সংকটকে মুক্ত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : শিক্ষার্থী, নওগাঁ সরকারি কলেজ

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত