ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দেশে জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি মানুষ

হুমায়ুন আহমেদ নাইম
দেশে জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি মানুষ

একটি সমাজ যখন উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলে, তখন স্বাভাবিকভাবে আশা করা হয় যে, তার সঙ্গে মানুষের মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও মানবিকতাও সমানতালে বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন। জনসংখ্যা খুব দ্রুত গতিতে বাড়লেও, প্রকৃত মানুষের সংখ্যা একই হারে কমে যাচ্ছে। প্রতিদিন সংবাদপত্রে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখে পড়ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ এবং সহিংসতার খবর। মনে হয়, সমাজ অপরাধের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। নারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ দিনের হোক কিংবা রাতের অন্ধকার, কোথাও যেন নিরাপত্তা নেই। গত কয়েকদিনে যে পরিমাণ ধর্ষণ হয়েছে তা বলাই বাহুল্য!

শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্র নৈতিক অবক্ষয়ের ছাপ স্পষ্ট। অর্থের লোভে আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব, এমনকি রক্তের সম্পর্কও কলুষিত হচ্ছে। সামান্য লাভের জন্য মানুষ প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে, অন্যের সম্পদ লুঠ করতে দ্বিধা করছে না। সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে, পারস্পরিক আস্থার জায়গা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার হার বেড়েছে, কিন্তু আমরা কেমন শিক্ষা পাচ্ছি? কেবলমাত্র সার্টিফিকেট অর্জন ছাড়া আর কিইবা করতে পারছি! নৈতিক শিক্ষার অভাবে আমরা শিক্ষিত অমানুষ তৈরি করছি। প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে, কিন্তু সেটি অপরাধ সংগঠনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া এখন গুজব ছড়ানো, ব্ল্যাকমেইল এবং অপরাধীদের সংগঠিত হওয়ার মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের অভাব, দারিদ্র্য এবং সামাজিক বৈষম্য অপরাধ বাড়িয়ে তুলছে। বেকার যুবকরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাবে তারা সহজ পথ খুঁজতে গিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্তি, নারী নির্যাতন ও দুর্নীতির মতো সামাজিক সমস্যাগুলোও বেড়ে চলেছে। এ অবক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে পরিবার থেকেই নৈতিক শিক্ষার সূচনা করতে হবে। বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদের শুধু ভালো রেজাল্টের জন্য চাপ না দিয়ে মানবিক মূল্যবোধ শেখানো। স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, যাতে বেকার যুবকরা সঠিক পথে চলতে পারে। সরকারকেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে, যেন ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা বাড়াতে হবে। সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিকদের এগিয়ে এসে অপরাধ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে। জনসংখ্যা বাড়ানো সহজ, কিন্তু প্রকৃত মানুষ গড়া কঠিন। আমাদের এখন প্রয়োজন বিবেকবান, মানবিক মানুষ তৈরি করা। অপরাধীর চূড়ান্ত শাস্তি নিশ্চিত করা। নৈতিকতা ও মূল্যবোধেরভিত্তিতে একটি সুস্থ সমাজ গঠন করতে না পারলে, আমাদের সভ্যতা কেবল জনসংখ্যার ভারেই নুয়ে পড়বে। মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসন সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত